আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় হাতে হাত রেখে কাজ করে যাওয়ার যৌথ ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে এক দিনের সম্মেলন। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে ইরাকের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে অংশ নেয় তুরস্ক, জর্ডান ও সিরিয়ার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো একই বৈঠকে অংশ চিরশত্রু ভাবাপন্ন ইরান-সৌদি আরব। চরমভাবে বিভক্ত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে স্বাগতিক দেশ ইরাক।
ক'দিন আগেও জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ও নিরাপত্তা বাহিনীর কামানের শব্দ আর বিমান হামলায় কেঁপে উঠতে ইরাক। ভয়াবহ সেই যুদ্ধের খত কাটিয়ে না উঠতেই এবার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সম্মেলনের আয়োজক দেশটি।
ইরাকের এ যাবতকালের সবচেয়ে কনিষ্ঠ স্পিকার মোহাম্মদ আল-হালবুসির উদ্যোগে শনিবার একদিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রথমবারের মতো একসঙ্গে বসছে ইরান ও সৌদি আরব।
চিরশত্রু ভাবাপন্ন ইরান-সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইরাক। চরমভাবে বিভক্ত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। ওই সম্মেলনে তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান, সিরিয়া ও কুয়েতের পার্লামেন্ট প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। ইরাকের পার্লামেন্ট মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
বর্তমানে ইরাকের অন্যতম ঘনিষ্ঠমিত্র হচ্ছে প্রতিবেশী ইরান। আর ইরান সৌদি আরবের ঘোর শত্রু। সম্মেলনে তাদের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনটির আয়োজন করেছেন ইরাকের এ যাবতকালের সবচেয়ে কনিষ্ঠ স্পিকার মোহাম্মদ আল-হালবুসি। ৩৮ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ বলেন, বাগদাদে প্রতিবেশী দেশগুলোর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আমি সম্মানিত হব।
ইতিমধ্যে তিনি সিরিয়ার পার্লামেন্ট প্রধান হাম্মুদেহ সাব্বাগকে স্বাগত জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিশাল এক প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ইরাকের মাটিতে পা রাখেন।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র, ইরানসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রভাব বিস্তার লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে ইরাক। কিন্তু বর্তমানে দেশটি আন্তর্জাতিক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখতেই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি সম্প্রতি রিয়াদ ও ইরান সফর করেন। ইরান ও সৌদি কর্মকর্তাদের একই সম্মেলনে যোগ দেয়ার ঘটনা এক ধরনের বিরল ঘটনাই বটে।
এদিকে সিরীয় যুদ্ধে তুরস্ক ও ইরান পরস্পরের বিপরীত পক্ষকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরীয় গৃহযুদ্ধে দেশটি বিশ্ব থেকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন সেই সিরিয়াকে আরব লীগে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে ইরাক।
প্রথমবারের মতো একই বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত ও জর্ডান। শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সিরিয়ার সরকারপন্থি গণমাধ্যম আল-মাসদার নিউজ।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটির আয়োজক ইরাক। এতে বলা হয়, এই সাত দেশের সংসদীয় প্রধানদের বাগদাদে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিতে অংশগ্রহণ করার কথা বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এই বৈঠকে ইরান এবং সৌদি আরব অংশগ্রহণ করতে দেখা যাবে। এই দুই দেশ একে অন্যকে আঞ্চলিক শত্রু হিসেবে গণ্য করে থাকে।
আরও বলা হয়, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং এই দুই দেশ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে একে অন্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। একে অন্যকে শত্রু মনে করা এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইরাকের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
গণমাধ্যমটি জানায়, বৈঠকটি সিরিয়ার জন্যও একটি বড় বিষয়। কারণ সিরিয়ায় সংকট শুরু হওয়ার পর দেশটি এই প্রথম সৌদি আরব ও তুরস্কের সঙ্গে দেশের বাইরের কোনও বিষয় সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দেবে।