চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কাঙ্খিত সাফল্য না আসলে, আসছে গ্রীষ্মেই তুরিনের বুড়িদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যেতে পারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। এমন গুঞ্জনে সয়লাব ইতালির ক্লাব পাড়া। যদিও, মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন আন্দ্রে পিরলো। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে ক্লাব কোষাগার খালি করে রোনালদোকে পুষবার মতো অবস্থা আর নেই য়্যুভেন্তাসের। সেক্ষেত্রে, এটাই হয়তো হতে যাচ্ছে ইতালিতে সিআর সেভেনের শেষ মৌসুম।
সেই ম্যানচেস্টার থেকে শুরু। যেখানেই গেছেন সঙ্গে নিয়ে গেছেন নিজের ভাগ্যটাকেও। যা তাকে, দিয়েছে দু’হাত ভরে। কোন ক্লাবকেই খালি হাতে ফিরতে হয়নি ক্রিস্টিয়ানোকে নিয়ে। ইউনাইটেডে লিগ শিরোপা, ক্লাব বিশ্বকাপের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগটাকেও নিজের করতলে এনে ফেলেছিলেন পুঁচকে রোনালদো।
এরপর সময়ের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদে যা করেছেন তা তো রীতিমতো কিংবদন্তির উপাখ্যান। অনেক ক্লাবের শোকেসেও নেই যত শিরোপা, তার চেয়েও বেশি আছে এক সিআর সেভেনের ব্যক্তিগত ঝুলিতে। যার মাঝে ৫টি আবার ইউসিএল ট্রফি। সোনার ডিম পাড়া হাঁসটাকে তাই চিনতে ভুল করেনি বিয়াঙ্কোনেরি'রা। নানা জায়গা থেকে ধার দেনা করে, টাকার বস্তা নিয়ে সেদিন তারা স্পেন থেকে ইতালিতে নিয়ে গিয়েছিলেন পর্তুগীজ রাজপুত্রকে। আশা ছিলো তার পায়ের জাদুতে, তুরিনে ফিরে আসবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
কিন্তু দুই মৌসুম পার হয়ে গেলেও, এখনো অধরা সে সোনার হরিণ। তবে, ৩৬ বছরের রোনালদোর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলবার জো নেই এখনো। চলতি মোসুমেও, সে গোল করলেই জিতে যায় পিরলো বাহিনী। আর রাজার নিষ্প্রভতার দিনে, মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে হয়ে ইতালিয়ান জায়ান্টদের। কিন্তু, এতেও মন গলছে না সমর্থকদের। ইতালিয়ান সাবেক ফুটবলার অ্যান্টোনিও কাসানো তো বলেই দিলেন, এভাবে রোনালদোকে পোষার না কি কোন মানেই হয় না। শুধু কি তাই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিতে এ মৌসুমেও যদি ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখে য়্যুভেন্তাস, তাহলে যেন সিআর সেভেনকে পত্রপাঠ বিদায় জানিয়ে দেয়া হয়, সে দাবিও জানিয়ে রাখলেন তিনি।
ক্লাব কর্তাদের মনের চিন্তা যে এর থেকে ব্যতিক্রম, তা কিন্তু বলা যায় না। কারণটা, তুরিনের বুড়িদের ব্যালেন্স শিট। রোনালদো আসার পর থেকে স্পনসার আর জার্সি বিক্রি থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো ঘরে তুলেছে ক্লাবটি। নিজেদের শেয়ারের অবস্থাও এখন তুঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলোয়ারও বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। কিন্তু, বছর বছর রোনালদোর ৩১ মিলিয়ন ইউরো বেতন গুণতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জুভরা।
কিছুদিন আগ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে খুব একটা সমস্যায় ছিলোনা ক্লাবটি। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে দর্শকশুন্য গ্যালারি বড় ক্ষতির মুখে ফেলেছে ক্লাব রেভিনিউকে। ফলে, খালি হতে বসেছে কোষাগার। ইতোমধ্যে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই ১১৩ মিলিয়ন ইউরো লস দেখাচ্ছে ক্লাবটি।
সেক্ষেত্রে, এ বিশাল ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে হয় ইউসিএল শিরোপা জিততে হবে জুভদের। অথবা চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই রোনালদোকে বিক্রি করতে হবে বড় অঙ্কের অর্থে। তাই বলাই যায়, আসছে গ্রীষ্মেই হয়তো নতুন ঠিকানায় দেখা যাবে সি আর সেভেনকে। হয়তো সেটা ইউরোপেরই কোন লিগে। আর না হলে, দু হাত প্রসারিত করে অপেক্ষা তো করেই আছে এমএলএস।