রাজনীতি মানুষের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। মাঠের রাজনীতির মাধ্যমে শত ত্যাগ-তিতিক্ষা আর বঞ্চনার শিকার হয়েও যুগে যুগে নারীরা দমে যাননি। হয়েছেন পুরুষদের সমকক্ষ কিংবা তাদের চেয়েও যোগ্য। বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বলা হয়ে থাকে সিরিমাভো বন্দরনায়েকে-কে। ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কায় তিনি যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারই পথ ধরে দেশে দেশে আজ নারী নেতৃত্বের জয়জয়কার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীদের দেশ পরিচালনা প্রশংসা কুড়াচ্ছে সর্ব মহলে।
সম্প্রতি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে সফল ৩ রাষ্ট্রনেতার তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। সেখানে বলা হয়, তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু মহামারিকে জয়ই করেনি, করোনা মোকাবিলায় স্থাপন করেছে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও, এ তালিকায় রয়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন ও বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলির নামও। নিজ দেশে করোনা মোকাবিলায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন তারা। বিশ্লেষকদের মতে, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে আছেন নারী নেত্রীরা।
রাজনীতি আর মানুষের কল্যাণে সরাসরি কাজ করাটা নারীদের জন্য কখনোই সুখকর ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। তবে, দিন বদলালেও পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা এখনও চক্ষুশুল নানা ক্ষেত্রে।
২১ জুলাই, ১৯৬০। বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শ্রীলঙ্কার সিরিমাভো বন্দরনায়েকে। সেই থেকে যাত্রা শুরু। যদিও তারও অনেক আগে থেকেই আঞ্চলিক পর্যায়ে রয়েছে নারী নেতৃত্বের উদাহরণ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত তান্নু তুভায় একসময় ছিল নারী শাসন। ১৯৫৩ সালে মঙ্গোলিয়াতেও আসে নারী নেতৃত্ব।
নারী নেতৃত্বের কথা বললে, এরপরই আসে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাম। যিনি ভারতের প্রথম এবং আজ অব্দি দেশটির একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও, ১৯৬৮, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ সালে যথাক্রমে চীন, ইসরাইল, শ্রীলঙ্কা এবং আর্জেন্টিনাও পায় নারী নেতৃত্ব। ব্রিটেনে ১৯৭৯ সালে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মার্গারেট থেচার। পাকিস্তানে ১৯৮৮ সালে আসেন বেনজির ভুট্টো। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৫ সালে জার্মানিতে অ্যাঙ্গেলা মার্কেল দায়িত্ব নিয়ে এখনও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
২০০৭ সালে ভারত পায় প্রতিভা পাতিলকে। তিনি দেশটির প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি। নেপালে ২০১৫ সালে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
এছাড়াও, বর্তমানে নরওয়ে, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, জর্জিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে নারীরা সুনামের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গেল বছরের ৩রা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কামালা হ্যারিস। দায়িত্ব নিয়ে তিনিও রেখে চলেছেন যোগ্যতার প্রমাণ। বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের এই সফলতা শিগগিরই ঘুচিয়ে দেবে লিঙ্গ বৈষম্য - আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা সবার ।