কিছু দুর্যোগ শুধু বিপদ নিয়েই না, আসে মানবিকতা আর পরোপকারিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিয়েও। দিকভ্রান্ত জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেয় কিছু যোদ্ধার সঙ্গে। মহামারি করোনা ঠিক তেমনই এক দুর্যোগ। যে যুদ্ধে মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ একদল তারুণ্যের শক্তি। মহামারির এক বছর পরে দুঃসময়ের সেই সম্মুখ-যোদ্ধারা বলছেন, করোনা শিখিয়েছে যুদ্ধ জয়ের কৌশল।
চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। সম্পূর্ণ অপরিচিত, অচেনা এক সময়। অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে শুধুই হেরে যাওয়ার গল্প। আর লাশের মিছিল। মানুষে মানুষে দূরত্ব তখন যোজন-যোজন। অদৃশ্য জীবাণু যেমন দূরত্ব বাড়িয়েছে তেমনি মানুষকে করেছে ঘরবন্দিও। তবে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও ঘরে বসে থাকেননি একদল মানুষ। পরিবার পরিজন আর সকল পিছুটান পায়ে ঠেলে সংক্রমিতদের নিরলস সেবা দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য-কর্মীরা। আবার তাদের খবর সংগ্রহে হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন সংবাদ যোদ্ধারাও।
অন্যদিকে, নিজের পেশার আর দায়িত্বের বাইরে গিয়েও দেশের মানুষের পাশে ছিল পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নিজেদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী না থাকলেও লাশ দাফন থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সামনের সারিতে ছিলেন তারা। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থী ফিরে যাননি ঘরে। অনাহারী-অর্ধহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তরুণদল।
এক চিকিৎসক জানান, শুরুতে পরিবার রাজি ছিল না। কিন্তু আমার দায়িত্ব থেকে আমি মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি করোনার জন্য কাজ করেছি; এটা শুনে মানুষ শ্রদ্ধা করতো। এটা অন্য ধরনের প্রাপ্তি।
সাংবাদিক জেনিয়া কবির সূচনা বলেন, আমি একজন সাংবাদিক এটা আমার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে কাজেরই একটা অংশ। সেই জায়গা থেকে আমি গিয়েছি।
স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, টানা ১০০ দিন শহরের ভাসমান অসহায় মানুষদের দুবেলা খাবার দিয়েছেন তারা।
যোদ্ধার ভূমিকায় রণাঙ্গন দাপিয়ে বেড়ানো মানুষগুলোকে হয়তো সময়ের স্রোতে ভুলে গেছেন অনেকেই। তবে তাদের সেই শক্তি, সেই সাহসিকতা আজ নাম লিখিয়েছে ইতিহাসে। যেকোনো সংকটে যুগিয়ে চলেছে প্রেরণা।
একতার শক্তি, সম্মিলিতের রুখে দাঁড়ানো- এতেই মিলেছে করোনা থেকে মুক্তি।