১০ বছর আগে ২০১১ সালে ১১ মার্চ জাপানের ফুকুশিমায় ঘটেছিল ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। ওকুমায় দাইচি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টটি বিধ্বস্ত হয় সুনামি আর ভূমিকম্পের কারণে। ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের শারনোভ্যালে পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট বিস্ফোরণের পর ফুকুশিমারটিই সবচেয়ে ভয়াবহ। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় আর জনবসতি রাখা হয়নি। দেড় লাখের বেশি মানুষকে ফুকুশিমা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জনবসতি নেই, মানুষে চিহ্ন নেই, রেডিয়েশনও আছে এমন এক স্থানে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছায় রয়ে গেছেন এক ব্যক্তি। এই ব্যক্তিটি সাকায় কাটো। তার প্রতিবেশী এমনকি পরিবারের সদস্যরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান ভূমিক্ম্প আর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের বিস্ফোরণের পর। সেখানে কাটো রয়ে যান এখান থেকে চলে যাওয়া বাসিন্দাদের পোষা প্রাণীসহ রাস্তার প্রাণীদের দেখভালের জন্য।
প্রথমে শখে এই কাজ করলেও এখন দায়িত্ব নিয়েই কেটো দেখাশোনা করছেন ৪১টি রাস্তার বিড়ালের। তাই ৪১টি বিড়াল নিয়ে তিনি থাকেন ফুকুশিমার বিধ্বস্ত শহরের একটি দোতলা ভবনে। ভবনটি মেরামত করাও সম্ভব হয়নি। ভবনে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা। আশপাশের পর্বত থেকে বোতলে করে খাবার পানি নিয়ে আসেন কাটো। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এই এলাকার বাইরে যেয়ে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয় তাকে।
এই বাড়িতে ঘুমানোর মতো কোন অবস্থা নেই। এই এলাকা থেকে ২ ঘণ্টা লাগে তার ফুকুশিমা শহরের বাসায় যেতে। তবে সংরক্ষিত এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই তিনি থাকেন এই এলাকাতে। কাটো জানান, পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায়ই তাকে জিজ্ঞাসা করে, কেন তিনি এখানে এত কষ্ট করে থাকেন। উত্তরে তিনি বলেন, তিনি এখানে আছেন উদ্বাস্তু বিড়ালগুলোর দেখাশোনার জন্য।
তিনি বলেন, প্রতিটা জীবনই মূল্যবান। অনেকেই তাকে এলাকা ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। উত্তরে তিনি জানান, আমি যদি মরেও যাই, এখানেই মরতে চাই এই বাচ্চাদের সঙ্গে। কাটো জানান, তার পরিবারের সবাই তার ওপর বিরক্ত। কারণ তার ছোট্ট কনস্ট্রাকশন কোম্পানির লাভের টাকা দিয়ে তিনি বিড়ালের খাবার আর ওষুধ কেনেন। মাঝে মাঝে সঞ্চয়েও হাত পড়ে। বছর বছর ধরে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। মাঝে মাঝে সেই ক্ষতিপূরণের টাকায়ও হাত পড়ে।
উদ্বাস্তু বিড়ালের দেখাশোনা করতে যেয়ে, বিড়ালগুলোর খাবার, চিকিৎসা আর নিজের গাড়ির তেল খরচ বাবদ কাটোর মাসে খরচ হয় ৭ হাজার ডলার। তিনি জানান, গেল ১০ বছরে তিনি ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার খরচ করেছেন। এমনকি প্রতিবেশীদের ফেলে যাওয়া বন্যশূকর দেখাশোনা করছেন তিনি। যেগুলো জাপানের পোকা হিসেবে পরিচিত। শুধু নিশ্চিত করেন যেন ওরা ক্ষুধার্ত না থাকে।
কাটো জানান, ওদের দেখাশোনা করা দিন দিনই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শেষ বিড়ালটা মারা যাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে চান তিনি। এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখানকার সব বিড়ালের দেখাশোনা করতে চান তিনি। ওদের এখানে এভাবেই ফেলে যাওয়াটা নৃশংস। কিন্তু কাটোর এই ভালো কাজ সহ্য হয় না অনেকের। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ ছিল, নভেম্বরে জাপানের সরকারের ধরা বন্য শূকর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।