ষোল বছর আগে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মেয়ে সালমা হাফিজ। বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেন চালক হিসেবে সালমা হাফিজ যখন বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন খবরের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন তিনি। কারণ বাংলাদেশে ট্রেনের চালক বা লোকোমোটিভ মাস্টার এমন একটি পেশা যেখানে নারীরা এখনও তেমনভাবে জায়গা করে নিতে পারেননি।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ১৫ জন নারী ট্রেনচালক থাকলেও প্রথম নারী হিসেবে এই পথটা দেখিয়েছেন সালমা হাফিজ। যিনি সহকারী ট্রেন চালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে এখন সরাসরি ট্রেন চালক অর্থাৎ ট্রেনের লোকো মাস্টার।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২০০ জন পুরুষ সহকর্মীর বিপরীতে ২০০৪ সালের মার্চে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী ট্র্রেন চালক।
সংসার আর পেশা এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সালমা বলেন, সবটা সামাল দিতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে ছোট দুই সন্তানকে ফেলে কাজে যাওয়ার সময়ের অনুভূতিটা কখনও কখনও কষ্ট দেয়। তবুও জীবনের প্রয়োজন আর দায়িত্ববোধ সেই অনুভূতিকে পরাজিত করতে হয় বারবার।
ট্রেন চালনা করা খুবই জটিল কাজ। প্রতিকূল পরিবেশ সামাল দেন কিভাবে প্রশ্ন ছিল তার কাছে। উত্তর দেন, প্রতিটা দিনই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বের হতে হয়। তবে সবচেয়ে খারাপ লাগা হিসেবে তুলে ধরেন ট্রেনের নিচে মানুষ কাটা পড়া বিষয়টিকে।
তিনি জানান, যখন দেখেন একজন মানুষ চোখের সামনে মারা যায় আর সেটা দেখেও মন শক্ত করে তার বাকি পথটা পাড়ি দিতে হয় তখন খুব মানসিক চাপ পড়ে।
সালমা বলেন, 'একটি বিষয় হলো, নারী পুরুষ সবাইকেই এ পেশাটিতে অত্যন্ত চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। যেমন রাস্তার উপর থেকে কেউ পাথর ছুড়ে মারে, সে জন্য সতর্ক থাকতে হয়। অনেক সময় চোখের সামনে মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে, তখন মনকে শক্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সবসময় সিগনালের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। বিপদ এড়ানোর জন্য প্রতিটি মুহূর্তে সচেতন থাকতে হয়।
চ্যালেঞ্জিং এই পেশাটাকে আঁকড়ে ধরে সালমা হয়েছেন দেশের নারীদের অনুপ্রেরণা। সেবামূলক এই পেশায় যোগদান করে মানুষের টিটকিরি-ভালোবাসা দুটোই পেয়েছেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ভালোবাসার আর উদ্দীপনা নিয়েই ট্রেন নিয়ে ছুটে চলেছেন ১৬ বছর।
বাধা যতই আসুক, শুধু এগিয়ে চলার পণ থাকুক মনে। হয়নি, হচ্ছে না- এসব ভেবে সময় নষ্ট নয়, হতেই হবে- এমন সংকল্পে সব বিপত্তি পেরিয়ে নারী হোক সাবলম্বী আর আত্মবিশ্বাসী এমনটাই প্রত্যাশা।