শারীরিক সামর্থ না থাকলেও, অদম্য সাহস আর দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে বিশ্বমানের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার প্রত্যয় বিল্লাল-খোরশেদ-নাহিয়ানদের। শুধু তাই নয়, প্যারা অলিম্পিক থেকে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এই শাটলাররা। এদিকে,পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে পারলে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
এমনটাই মনে করেন প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খান।
হুইল চেয়ারে বসে ব্যাডমিন্টন খেলছেন কাজী বিল্লাল। সাভারের সিআরপি থেকে ঢাকায় প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপে নিজের সেরাটা দিতে এসেছিলেন এই তরুণ। তার মতো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন খোরশেদ আলমও র্যাকেটের ঝড় তুলেছেন স্বমহিমায়।
শারীরিকভাবে অসমর্থ এই দুই প্রতিভাবান শাটলার ব্যাডমিন্টন কোর্টে খুঁজে নিয়েছেন জীবনের আনন্দ আর প্রেরণা। যাদের স্বপ্নটাও যেনো আকাশচুম্বী।
শাটলার কাজী বিল্লাল বললেন, তাদের যে মানুষগুলো ঘরে ভেতর বন্দি রয়েছেন, যারা ভাবছেন তাদের দিয়ে কিছুই হবে না। তাদের অনুপ্রেরণা দিতেই ব্যাডমিন্টনকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
বিল্লাল বলেন, আমাদের দেখে যেন তারা বন্দি জীবন থেকে বের হয়ে আসেন। অচল অক্ষমতাকে বাধা মনে না করে নিজের ব্যক্তিত্ব যেন প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
তিনি বলেন, অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য। চেষ্টা করবো দেশের একটা গৌরব যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে পারি।
আরেক শাটলার খোরশেদ আলম জানান, অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফেরার স্বপ্ন তার। শাটলার খন্দকার নাফিউর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরা যে আসলে কিছুই না, তারা তাদের মনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কিছু করে দেখিয়ে দিতে পারে সেই চেষ্টাটাই করছি।
কাজী বিল্লাল ও খোরশেদের মতো এমন অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় দ্বিতীয়বারের মত ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্যারা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে আনন্দে মেতে উঠেন। কেউ হুইল চেয়ারে, কেউবা এক হাতে স্ট্রেচার ও এক হাতে র্যাকেট নিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে খেলে যাচ্ছিলেন। হতাশা নয় বরং খেলোধুলার মাধ্যমে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে বদ্ধপরিকর তারা।
২০১৯ সালে প্রথমবার প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপ হয়েছিলো। সেবার ৩৫ জন অংশ নিলেও, এবার অংশ নিয়েছে ৬২ জন। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে পারলে সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক এই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই, এদের মুখে (প্রতিবন্ধী) হাসি ফোটাতে পারলে তা যে আমাদের জন্য কত বড় অর্জন। প্রতিবন্ধীরা এক সময় বাংলাদেশ বোঝা নয় বরং সম্পদ হিসেবে দাড়াবে এমন বিশ্বাসের কথাও জানালেন সাবেক চ্যাম্পিয়ন।
তৃনমুল পর্যায় থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে করে যাওয়ার প্রত্যয় এনায়েতের।