কাতার-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার নতুন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ডানপন্থী অভিহিত করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণমাধ্যমটির শতাধিক স্টাফ। এ বিষয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন তারা। এতে বলা হয়, এ ধরনের উদ্যোগ সাংবাদিকতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। টেলিভিশন চ্যানেলটির সুনাম নষ্টের পাশাপাশি এর মাধ্যমে আল-জাজিরার কলঙ্কজনক অধ্যায় শুরু হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ঐ চিঠির একটি অনুলিপি হাতে পাওয়ার দাবি করেছে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। এর আগে, দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল দলগুলোর বিরুদ্ধে একটি ডানপন্থী ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে আল জাজিরা। যেটি আল জাজিরার নৈতিক, সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে মেরুকরণ হয়েছে এটা সত্য। তবে সঙ্কট সমাধানে আল-জাজিরা একই ধরনের পদক্ষেপ নিলে এতে সমস্যা আরো জটিল হবে। যুক্তরাষ্ট্রে এমনিতেই আল-জাজিরার সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্র কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ধরনের উদ্যোগে তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শকে সামনে চলে আসবে।
তবে আল-জাজিরার দাবি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সমালোচনা- সবকিছু তুলে ধরতেই রক্ষণশীল প্ল্যাটফর্ম গঠন করা।
তবে কর্মীরা বলছেন, সাংবাদিকতা কোনো রাজনীতি নয়; যেখানে ডানপন্থী অথবা বামপন্থী অবস্থান নেয়া যাবে। গণমাধ্যম প্রান্তিক গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং সুবিধাবঞ্চিতদের কথা বলবে। আর যদি তা না হয় তাহলে সেটি গণমাধ্যমের সাথে প্রতারণা করা হবে। আল জাজিরা টেলিভিশন এবং নেটওয়ার্ক দীর্ঘ দিন সত্য প্রকাশ করে গেলেও নতুন উদ্যোগ টেলিভিশনের নীতিমালার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্য নয় বলেও ঐ চিঠিতে তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘রাইটলি' অনুষ্ঠানের কারণে বহুমাত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হবে আল জাজিরা। আল জাজিরার অভ্যন্তরীণ আলোচনায় ঐ সাংবাদিকরা বলেন, এটি কোনোভাবেই আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের অংশ হতে পারে না।
ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আল জাজিরার বেশ কয়েকজন নির্বাহী প্রযোজক, উপস্থাপক এবং প্রতিনিধি রয়েছেন। ওই চিঠিতে অন্তত ২০ জন তাদের চাকরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওয়াশিংটনে কর্মরত আল-জাজিরার এক সাংবাদিক দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, এ বিষয়ে আরো একটি চিঠি আল জাজিরার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হতে পারে।
আল জাজিরা টেলিভিশন মূলত এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জাতিগত, সাংস্কৃতিক এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যডানপন্থী রাজনীতির মতবাদ এবং ভাবধারা তুলে ধরতে চায়। গত মঙ্গলবার রাইটলি নামের ওই প্ল্যাটফর্মে প্রথম পর্ব প্রচার করা হয়। এটি মূলত মতামত-ভিত্তিক সাক্ষাতকার অনুষ্ঠান। সাংবাদিক স্টিফেন কেন্ট-এর উপস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের আন্দোলন, তাদের বাস্তবতা ও অনুভূতি, প্রয়োগবাদ এবং যুক্তিবাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ এবং রিপাবলিকান পার্টির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। এই ধরনের অনুষ্ঠান আল জাজিরার কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের ভুল পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন টেলিভিশনটির ইংরেজি বিভাগে কর্মরত বেশিরভাগ সাংবাদিক।
গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশের ওপর প্রভাব বিস্তারে আল-জাজিরারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে কাতার। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসের সিনিয়র ফেলো ড. এইচ.এ. হেলার বলেন, 'আল-জাজিরা টেলিভিশনের আরবি বিভাগ সবসময় রক্ষণশীল মতবাদ প্রচার করে থাকে। নতুন অনুষ্ঠান 'রাইটলি' মূলত তারই অংশ। আরব বিশ্বের আর কোনো চ্যানেল এভাবে সংবাদ প্রচার করে কিনা আমার জানা নেই। অন্যান্য টেলিভিশনের সাথে এর অনেক পার্থক্য রয়েছে। তারা রাষ্ট্রহীন মানুষ, ইসলামী সংগঠন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসকগুলোর পক্ষে নাকি বিপক্ষে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। '
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত চার বছর ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাতারের উষ্ণ সম্পর্ক থাকলেও বাইডেন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক গভীর করতেই এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে আল জাজিরা।
তবে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের মুখপাত্র বলেছেন, 'আল জাজিরা সব সময় তথ্য নির্ভর বিতর্ক এবং সবপক্ষের কথা তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করে থাকে। আমাদের পুরানো একটি প্রকল্প যেটি AJ+ নামে পরিচিত। সেটিই নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের আরো আনেক প্রোগ্রাম রয়েছে। যেখানে আমাদের সাংবাদিরা নতুন চিন্তা, সৃষ্টিশীল কর্ম তুলে ধরে। 'রাইটলি' তারই একটি অংশ। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বকে সঠিক তথ্য জানানো। যাতে মানুষ উৎসাহিত হবে। সাংবাদিকরা তাদের প্রতিভা ও সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তুলছে। 'রাইটলি তারই পরবর্তী একটি অধ্যায়।'