বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে দুর্দশার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো তোপের মুখে পড়ল বোয়িং। এবার ইস্যু এই বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান।
ইউনাইটেড এয়ারের ফ্লাইট ৩২৮’এর বিমানের ক্রু দুর্ঘটনার আগে বলেছিলেন, এয়ারক্রাফটির ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। দ্রুত বিমান অবতরণ করাতে হবে। এরপর নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বোয়িং ৭৭৭’এর যাত্রীবাহী বিমানটি। গত সপ্তাহেই ডেনভার থেকে হাওয়াই যাওয়ার পথে উড্ডয়নরত অবস্থায় আকাশেই ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এই বিমানের। শুধু পাইলটের দক্ষতায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান ২৩১ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু।
এ মডেলের বিমান ঘিরে শুরু হয়েছে তদন্ত। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণেই হঠাৎ আগুন ধরেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় যোগাযোগ নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্যানের ব্লেডে যে ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে সেটির ত্রুটির কারণেই ইঞ্জিন বিকল হয়েছে এবং আগুন ধরেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, তারা ৭৭৭ মডেলের বিমান আর পিডব্লিউ ৪০০০ ইঞ্জিনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তারাও প্রাথমিক ধারণা করছেন, বিমানের টাইটানিয়াম ফ্যান ব্লেডে সমস্যার কারণেই ইঞ্জিন বিকল হয়েছে।
বিমানগুলোতে ব্যবহৃত পিডব্লিউ ৪০০০ ইঞ্জিনের ২২ টি ব্লেড আছে। ইঞ্জিন বিকলের কারণে বিমান ভূপাতিত হলে একটি ব্লেড ইঞ্জিনের ভেতর বিকল অবস্থায় ছিল, আরেকটি ছিল কলোরাডোর মাঠে। ব্লেডগুলো ভাঙা অবস্থায় ছিল, যা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বিমানের গায়েও আঘাত লেগেছে এই ব্লেডগুলোর। হঠাৎ আগুন ধরার পর কালো ধোয়ায় ছেঁয়ে যায় আকাশে। যাত্রীরা বলেছেন, ইঞ্জিনে আগুন ধরে বিমানের বিভিন্ন অংশ আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো পড়ছিল। তদন্ত করা হচ্ছে, বিমানের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কতক্ষণ আগে ব্লেডটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানটি আকাশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির পিডব্লিউ ৪০০০ ইঞ্জিনটিতে আগুন ধরে যায়। এরপরই সারাবিশ্বে ৭৭৭ মডেলের সব বিমানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া এই মডেলের এক হাজার ৬০০টি বিমান ব্যবহার করে। সারাবিশ্বেই আপাতত বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান চলাচল বন্ধ।
বোয়িং ৭৭৭ ত্রিপল সেভেন নামেও পরিচিত। বোয়িংয়ের বৃহত্তম বিমানের এটি একটি। বিশ্বের বৃহত্তম টুইন জেট এটি। বোয়িং ৭৬৭ ও ৭৪৭ এর মধ্যে দূরত্ব কমাতেই ৭৭৭ মডেলের বিমানটি তৈরি করে বোয়িং। ১৯৯০ সাল থেকে আকাশে উড়ছে বোয়িং ৭৭৭। ১৯৯৫ সাল থেকে এই মডেলের বিমান ব্যবহার করছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। বর্তমানে এয়ারবাসের এ ৩৫০ ও এ ৩৩০-৯০০ মডেলের বিমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এ বিমান।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আকাশপথে অন্তত ৩১টি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বোয়িং ৭৭৭। এর মধ্যে ৭টি বিমান দুর্ঘটনা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪১ জন।