বর ও কনের বয়স একশ বছরের উপরে। এরপরও বিয়ের আয়োজনের ছিল না কোনও কমতি। বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড থেকে শুরু করে সহস্রাধিক মানুষের তিন দিন ধরে ভোজনের আয়োজন। বিবাহ বাসরে ব্রাহ্মণ দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়েছে সনাতনী বেদমন্ত্র দিয়েই। নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা আর সনাতন রীতিতে ধুমধামসহ আয়োজন ছিল হাজারও মানুষের। এরকমই এক বিরল বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পল্লীতে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম দক্ষিণ মেড়াগাঁওয়ে প্রায় মাস খানেক ধরেই আয়োজন চলে শতবর্ষী এই বর-কনের বিয়ের। ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত ৮টায় বর আসেন গাড়িতে চড়ে। যথারীতি বরকে নিয়ে বসানো হয় বিবাহ বাসরে এবং সাজিয়ে-গুজিয়ে তার পাশেই বসানো হয় কনেকে। এরপর বেদমন্ত্র ‘যদিদং হৃদয়ং মম-তদস্তু হৃদয়ং তব’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সনাতনী রীতিতে মালাবদলসহ সবরকম আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ে।
বর ১০৭ বছর বয়সী বৈদ্যনাথ দেবশর্মা। আর কনে তারই ৯০ বছর আগে বিয়ে করা ১০৩ বছর বয়সী স্ত্রী পঞ্চবালা দেবশর্মা।
বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ডে তিনি উল্লেখ করেন, ৯০ বছর আগে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং বিয়ের পঞ্চম পীড়ি অর্থ্যাৎ পঞ্চম প্রজন্ম পার হয়েছে। এ জন্যই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আবার এই বিয়ে।
বংশধরদের মঙ্গলের জন্য এই বিয়ের আয়োজন বলে জানালেন বর নিজেই। আর বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া কনে জানালেন, ছোটবেলা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় বিয়ে কি তা তিনি বুঝেন নি। কিন্তু এবার এই বিয়েতে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন তিনি।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যিনি বেদমন্ত্র দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছেন, সেই ব্রাহ্মণও জানান, এমন বিয়ে তিনি কখনই দেননি এবং দেখেন নি। বিবাহ রেজিস্ট্রারও জানান একই কথা।
ধর্মীয় রীতির পাশাপাশি ধুমধামের কোনও কমতি ছিল না বিয়েতে। বাদ্য-বাজনা, নাচ গান, হাজারও মানুষের প্রীতিভোজসহ ছিল সব আয়োজন। পরিবারের সদস্যরাও এতে বেশ আনন্দিত। আর প্রতিবেশী এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয় স্বজনরাও বেশ উপভোগ করেছেন এই বিয়ে অনুষ্ঠান।
এলাকার জন প্রতিনিধিরা ধুমধামের সঙ্গে ব্যতিক্রমী এই বিয়ে অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে জানালেন, এরকম বিয়ে তারা কখনও দেখেননি। এমন বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুশি তারা।
বর ও কনে এরকম দীর্ঘজীবন লাভ করায় পরিবারের সদস্যরা আবারও আয়োজন করেছে এরকম বিয়ের অনুষ্ঠানের। তাদের বংশধররাও যাতে এরকম বয়স লাভ করতে পারে এমন প্রত্যাশা পরিবারের সদস্যদের।