ক্লাব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ইউরোপের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে। সেই ফুটবলারের এখন ঠাঁই হচ্ছে না সাইপ্রাসের অখ্যাত একটি ক্লাবেও! এক সময়ের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা এখন রীতিমতো ছন্নছাড়া!
এক সময় জিতেছিলেন ক্লাব ফুটবলের অন্যতম মূল্যবান শিরোপা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। খেলেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে। মাত্র ৩১ বছর বয়সেই জীবনের মোড় ঘুরে গেছে নেদারল্যান্ডসের ফুটবলার আলেক্সান্ডার বাটনারের। এখন আর কোন ক্লাবেই জায়গা হচ্ছে না তার!
নানা দেশ ঘুরে সাইপ্রাসের ক্লাব অ্যাপোলোন লিমাজলে যোগ দিয়েছিলেন বাটনার। কিন্তু মাত্র ১৭ দিনের মাথায় তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে ক্লাবটি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত ওজনের জন্য মেডিকেল টেস্টে পাশ করেননি বাটনার। ফলে 'বাজে ফিটনেস' নিয়ে অনুশীলনের একদিনের মাথায় তার সঙ্গে ২০২২ সাল পর্যন্ত হওয়া চুক্তিটা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে তারা।
পাল্টা অভিযোগ করে বাটনার বলেছেন, ক্লাব তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে এবং তার বোনাস পর্যন্ত আটকে দিয়েছে।
ক্লাব আর তার মধ্যে একটা কঠিন বিরোধ চলছে বলা চলে। অথচ কী রঙিন একটা জীবন পেছনে ফেলে এসেছেন বাটনার!
২০১২ সালে তাকে দলে ভেড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সে সময় তাকে ভাবা হচ্ছিল ফরাসি তারকা প্যাট্রিক ভিয়েরার বিকল্প হিসেবে। স্বদেশি ক্লাব ভিতেসে থেকে ৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানইউতে যোগ দেন মাত্র ২২ বছর বয়সে। বাটনারকে দলে ভিড়িয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তখনকার রেড ডেভিল কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। গণমাধ্যমে ফার্গি বলেন, ইউরোপের অন্যতম সেরা লেফটব্যাক আলেক্সান্ডার বাটনার। আমরা খুবই আনন্দিত তাকে সাইন করতে পেরে। সে এমন একজন, যাকে আমরা অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবটির সঙ্গে বাটনারের চুক্তি হয় ৫ বছরের। উইগানের বিপক্ষে খেলতে নেমে অভিষেকেই আলো ছড়ান তিনি। ফার্গির কথাকে যৌক্তিক প্রমাণ করে প্রথম ম্যাচেই করেন গোল। সঙ্গে দুর্দান্ত একটি অ্যাসিস্ট।
তবে বেশিদিন নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারেননি বাটনার। বলা হয়, মানসিকভাবে বেশ অস্থির ছিলেন তিনি। ফলে ১ম মৌসুমে কেবল মাঠে নামা হয় ৫ ম্যাচে।
২০১২-১৩ মৌসুমের শেষ ম্যাচটা ম্যান ইউনাইটেডের জন্য নানাভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তিন দশকের কোচ ফার্গুসনের ওটাই ছিল শেষ ম্যাচ। রেড ডেভিলরা সেবারই সবশেষ ইপিএল জিতেছিল। কোচের শেষ ম্যাচটাকে রাঙান বাটনার। ওয়েস্টব্রমের বিপক্ষে ৫-৫ গোলে ড্র করা ম্যাচে জোড়া গোল করেন এই ডাচ।
তবে ফার্গির বিদায়ের পর খন্ডকালীণ কোচ ডেভিড ময়েজের অধীনে সুযোগ মেলেনি বাটনারের। এরপর লুই ফন গাল যখন দায়িত্ব নিয়ে লুক শ' কে দলে ভেড়ান, এরপরই দলে একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি।
ইংল্যান্ডে খুব একটা উপভোগ্য সময় না কাটালেও, এখনও স্মৃতি হাতড়ে নিজের সুসময়গুলো খুঁজে বেড়ান বাটনার।
তিনি বলেন, জোর গলায় কয়জন বলতে পারে আমি ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন? আমি পারি। অনেকেই পারে না। এমনকি স্টিভেন জেরার্ডের মতো তারকারাও কখনো ইপিএল জিততে পারেনি। আমি সেখানে অনেক ভালো ফুটবলার হতে পেরেছিলাম। আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছি। আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছি, যেটা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।
যাই হোক, দলে জায়গা হারিয়ে ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে ইংল্যান্ড ছেড়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমান বাটনার। যোগ দেন ডায়নামো মস্কোতে। ৩ মৌসুম কাটান সেখানে। এরপর ফেরেন শৈশবের ক্লাব ভিতেসেতে। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের একটি ক্লাবে।
গেল জানুয়ারিতে দুই পক্ষের সম্মতিতে সেই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সাইপ্রাসের ক্লাব অ্যাপোলোন লিমাজলে যোগ দেন বাটনার। মাত্র ১৭ দিনের মাথায় সেই ক্লাব ছেড়ে দিল তাকে!
এখন স্রেফ বেকার বাটনার। ছন্নছাড়া জীবন যাপন করছেন। শীঘ্রই জিমে ফিরে নিজের শরীরটাকে ঠিকঠাক করতে না পারলে হয়তো আক্ষেপেই পুড়তে হবে তাকে বাকি জীবন!