অবশেষে সাজার দায় থেকে মুক্তি পেয়েছেন নিরপরাধ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম নামের সেই ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় দেন।
দীর্ঘ ১৮ বছর আগের নম্বর জালিয়াতির এক মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় কামরুল ইসলামের। এ সাজা বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত মোহাম্মদ কামরুলের ক্ষেত্রে সাজা পরোয়ানা (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে এ ভুলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলাটি নতুন করে তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে তা দুদককে বিবেচনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
মোহাম্মদ কামরুলের করা রিটের ওপর শুনানির পর এ রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে মোহাম্মদ কামরুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বিজয়া বড়ুয়া। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
রায়ের পর আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেন, এর আগে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে মোহাম্মদ কামরুলকে হয়রানি ও গ্রেফতারের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মোহাম্মদ কামরুলকে জড়িয়ে দেওয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়েছে। ফলে মোহাম্মদ কামরুল এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেলেন।
ঠিকানার ভুলে দুদকের মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে নিরপরাধ মোহাম্মদ কামরুল ভোগান্তি পোহাচ্ছিলেন। তবে তাকে কারাভোগ করতে হয়নি। এ অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে গত বছর উচ্চ আদালতে রিট করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় আদালতে দাখিল করা বক্তব্যে দুদক জানায়, এজাহার ও অভিযোগপত্রে ‘অনিচ্ছাকৃত’ অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করা হয়।
নথি থেকে জানা যায়, এসএসসির ভুয়া নম্বর ও প্রশংসাপত্র তৈরি করে মাইজদী পাবলিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে (১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির অভিযোগে কামরুল ইসলামের (ঠিকানা: পূর্ব রাজারামপুর) নামে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে সুধারাম থানায় মামলা করে। জব্দ করা ভর্তির আবেদনপত্রে কামরুলের জন্ম-তারিখ ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ও গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রায় ১০ বছর পর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেন, যেখানে কামরুল ইসলামের গ্রামের ঠিকানা পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করা হয়।
জানা যায়, এ মামলায় ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল আদালতে পুলিশের (পিঅ্যান্ডএ) এক প্রতিবেদনে এক সাক্ষীর বরাত দিয়ে বলা হয়, আসামি মো. কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পূর্ব রাজারামপুর ঠিকানা সঠিক নয়। প্রকৃত আসামি কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর, যিনি দেশের বাইরে আছেন। এই মামলায় নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কামরুল ইসলামকে (পিতা: আবুল খায়ের, গ্রাম: পূর্ব রাজারামপুর) দোষী সাব্যস্ত করে তিনটি ধারায় ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে। সব কারাদণ্ড একসঙ্গে চলবে বলা হয়।
এরপর ওই মামলায় সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে গত বছরের অক্টোবরে মোহাম্মদ কামরুল (পূর্ব রাজারামপুর) রিট করেন। এতে যুক্ত এক প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, তিনি বর্তমানে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। তার সার্ভিস বুক ও এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে তিনি ১৯৯০ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ মামলায় উল্লিখিত শিক্ষাবর্ষ (১৯৯৮-৯৯) সময়ে তার বয়স ছিল ৮ বছর। নোয়াখালীর হরিনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মোহাম্মদ কামরুল এসএসসি পাস করেন বলে ওই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। ওই সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য মোহাম্মদ কামরুলকে কোনো ধরনের হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মোহাম্মদ কামরুলকে শনাক্তকরণ বিষয়ে দুদককে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় দুদক ভুল স্বীকার করে আদালতে বক্তব্য দাখিল করে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, মামলার বাদী শহীদুল আলম এজাহারে অনিচ্ছাকৃত ভুলে অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর এবং তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহফুজ ইকবাল অভিযোগপত্রে ভুলবশত অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করেন।