১০ বছর ধরে গণ শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের উপর বাস করছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার হতদরিদ্র এক পরিবার। মুজিব শতবর্ষের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের বর্তমান তালিকায় নাম নেই তাদের। এক খণ্ড জমি ও একটি ঘরের বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন এই পরিবারটি। হতদরিদ্র এ পরিবারের গৃহকর্তার নাম মো. সুমন। আর গৃহিনীর নাম সাথী বেগম। সুমন মানসিক প্রতিবন্ধী একইসাথে পঙ্গু।
সুমনের স্ত্রী সাথী বেগম সময় নিউজকে জানান, ১০ বছর যাবত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বন্দরের গণশৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের উপর বসবাস করছেন তারা। দরিদ্রতার কারণে মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারেননি। পেশায় সুইপারের কাজ করেন সাথী বেগম। পাঁচ সন্তান নিয়ে মানুষের দানে কোনোভাবে দিন কাটে তার। সেপটিক ট্যাংকের উপর খুপড়ি ঘর করার আগে পাশেই জনৈক সিকদারের জমিতে খুপড়ি ঘর করে ৫-৬ বছর বাস করেছেন এ পরিবার। কিন্তু ওই জায়গা থেকে বিতাড়িত হওয়ায় গণশৌচাগারের ট্যাংকির উপর বসবাস শুরু করেন।
সাথী বেগম আরো জানান, ১৫-১৬ বছর আগে সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সাথী বেগমের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায়। সৎ মায়ের যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকতে না পেরে ১৭-১৮ বছর আগে বরিশালের বাবুগঞ্জে আসেন সাথী বেগম। সেখানে পরিচয় হয় বাগেরহাটের মো. সুমনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়। সংসার জীবনের ৯-১০ বছরের মাথায় এসে এক সময়ে নিখোঁজ হয়ে যান সুমন। বেশ কয়েক মাস পর বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে তাকে খুঁজে পেলেও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায় তার। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হারায় সুমন। এ অবস্থায় চলছে সুমন ও সাথীর পরিবার।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসনে গৃহনির্মাণ কার্যক্রমের খবরে আশা দেখছিলেন সাথী বেগম। একটি ঘর পাবেন এই আশা থাকলেও সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তালিকায় নাম নেই সুমন-সাথী পরিবারের। নেই তাদের কারো জাতীয় পরিচয়পত্র।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সচেতনতা না থাকায় সুমন-সাথী পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়নি। কোনো মানুষের দয়া আর সাহায্যে কোনোভাবে দু-মুঠো খেয়ে জীবন বাঁচে তাদের।
এ ব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, সুমন-সাথী পরিবারের খবর পেয়ে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। তারা যাতে সহযোগিতা পান এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথাও বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, বাবুগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৭০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এরমধ্যে ১১০টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখনো ৬০টি ঘরের নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে। বরিশাল জেলায় বরাদ্দকৃত ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৬টি। এরমধ্যে ১ হাজার ৯টি ঘরের নির্মাণ ও বরাদ্দ শেষ হয়েছে।