ভালো কাজের প্রলোভন আর প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ভারতে পাচার করা ৩৮ বাংলাদেশি নারী-শিশুকে উদ্ধারের ৩ থেকে ৫ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতীয় পুলিশ, বিএসএফ ও কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনারের কর্মকর্তারা যৌথভাবে বেনাপোল চেকপোস্ট শূন্য রেখায় এসব নারী-শিশুকে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এসময় আইনি সহায়তা দিয়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের গ্রহণ করে মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোর, জাস্টিস এন্ড কেয়ার ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি।
ফেরত আসা নারী, শিশুরা হলেন- বাগেরহাটের শাহানাজ আক্তার, তৃষ্ণা মন্ডল, আফসানা আক্তার, তুহিন হাওলাদার, ফারজানা আক্তার, সাহাজুল শেখ, মীম হাওলাদার, সোনা শেখ ও শাকিব, নড়াইলের আশা শেখ, রুকসানা মোল্লা, পপি রানী শিকদার, ফরিদপুরের রহিমা খান, বগুড়ার আদুরী খাতুন, কবিতা আক্তার, গাইবান্ধার সানজিদা বেগম, নীলফামারীর অনুপা বিবি, কক্সবাজারের রাফা মনি ও সুহান।
আরও রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রুনা আক্তার, নাসিমা ভূঁইয়া, সানজিদা আক্তার, খুলনার তীর্থ বিশ্বাস, মৌসুমি আক্তার, সোনালী খাতুন, বরিশালের সুমি আক্তার, যশোরের কিয়া খাতুন ও মাকসুদা বেগম, সাতক্ষীরার নূরজাহান, নরসিংদীর পাইরা বেগম, পাবনার পারভিন বেগম, সাতক্ষীরার রিক্তা, ঢাকা কেরানীগঞ্জের অজয়, নোয়াখালীর শাকিল। ঝিনাইদহের দীপরঞ্জন বিশ্বাস, পিরোজপুরের রাজিব হাওলাদার, লক্ষ্মীপুরের রবিউল ইসলাম রনি ও কুড়িগ্রামের মোফাস্বেল হক।
জানা যায়, সংসারে অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে আসছে শত শত বাংলাদেশি নারী ও শিশু। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে এদেরকে পাচারকারীরা নিয়ে যায় ভারতে। পরে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অসামাজিক আর ঝুঁকিমূলক কাজে ব্যবহারে বাধ্য করে।
এসময় আত্মরক্ষায় কেউ পালিয়ে পুলিশে ধরা দেয় আবার কাউকে পুলিশ উদ্ধার করে পাচারকারীদের আস্তানা থেকে। আবার অনেকে নিয়তি ভেবে অন্ধকার জগতে সপে দেয় নিজেকে। তবে যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাদের প্রথম আশ্রয় হয় ভারতের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সেভ হোমে। পরে দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনায় স্বদেশ প্রত্যাবাসনে এরা দেশে ফেরেন।
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) সামিমা ইয়াসমিন স্মৃতি জানান, ফেরত আসা বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের উদ্ধারের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আহসান হাবিব জানান, কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশের কাছ থেকে ফেরত আসা নারী ও শিশুদের তিনটি মানবাধিকার সংগঠন গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজিবী সমিতি প্রেগ্রামার অফিসার রেখা বিশ্বাস জানান, পাচারকারীদের হাত দেশ ও দেশের বাইরে বিস্তৃত। প্রতিবছর শত শত নারী ও শিশু সীমান্ত পথে পাচার হচ্ছে ভারতে। তবে তাদের মাত্র ৫ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পাচার প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোল গড়ে তুললে পাচার প্রতিরোধ কিছুটা সম্ভব হবে।
যশোর রাইটসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আযহারুল ইসলাম জানান, নারী,শিশুদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীরা ভারতে নিয়েছিল। এদেরকে আইনি সহায়তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অন্যান্য এনজিও সংস্থার পাশাপাশি রাইটস যশোর কাজ করবে।