হাটের নাম আটঘরের হাট। শত বছর পেরিয়ে গেছে। তবু আজও হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বয়সী এই হাটটি। দেশের দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে প্রাচীন এই গ্রামীণ হাটটি ভাসমান নৌকার হাট নামেও পরিচিত। সুদীর্ঘ খালের পাশে গড়ে ওঠা হাটে আজও পরতে পরতে যেন ঐতিহ্যের সন্ধান। তাই হাটের নিয়মিত ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও পর্যটকের আকৃষ্ট করে।
ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী এই হাটটি ভৌগোলিক সমীয় পিরোজপুর জেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর নামক স্থানে রয়েছে। আটঘর থেকেই হাটের নামকরণ হয়েছে আটঘরের হাট। ঝালকাঠি সদর উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার শেষ সীমানায় হাটটি অবস্থিত। এমনিতে দুই উপজেলার ২৫-৩০ গ্রামের মানুষের আনাগোনা বছরজুড়ে। তবে প্রতি বছর নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে বর্ষা মৌসুমে এই হাটে হাজার হাজার নৌকা কেনাবেচার ধুম পড়ে। নৌকা কিনতে আসেন পুরো বরিশাল বিভাগের মানুষ। বছরের বর্ষা মৌসুমে নৌকা এবং পেয়ারার ভাসমান হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে দেশের দূর-দূরান্তের পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। বছরের অন্য সময়টা ঝালকাঠি ও পিরোজপুর এই জেলার অসংখ্য লোকজন হাট জমিয়ে রাখে। বংশপরম্পরায় এই হাটেই পণ্যসামগ্রী কেনাবেচার সাথে জড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। প্রাচীন এই হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায়। চাল-ডাল, তরিতরকারী, শাড়ি-লুঙ্গিসহ সংসারের সবকিছুর চাহিদা পূরণ হবে এখান থেকেই।
সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হাট বসে। এই হাটের আরেকটি বিশেষ ঐতিহ্য গ্রামীণ মিষ্টি সামগ্রী। নানা রকম মিঠাই মন্ডার পসরা সাজিয়ে বংশপরম্পরায় হাটের দোকান চালাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে করোনার শুরু থেকেই মিষ্টি সামগ্রীসহ অনেক পণ্যের কেনাবেচা অনেকটা কমে গেছে হাটের বলে বিক্রেতারা জানান।
অমল কৃষ্ণ সাহা নামের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী জানান, তার বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠি গ্রামে। বাবার সাথেই ছোট বেলা থেকে হাট করে আসছেন তিনি। বাবা তার বাবা মারা গেছেন অনেক বছর আগে। কিন্তু বাবার পেশা আঁকড়ে ৪০ বছর ধরে হাটে মিষ্টি বিক্রি করে আসছেন তিনি।
আবুল হোসেন নামে ঘরতে আসা এক যুবক বলেন, এই হাটে এলেই গ্রামীণ মিষ্টি খেতে ভুলি না। শহরে এমস স্বাদের মিষ্টি পাওয়া যায় না। এখানে এলে গ্রাম বাংলার হারানো দিনের একটা ঐতিহ্য খুঁজে পাই। তাই সময় পেলেই হাটে বেড়াতে আসি, বলেন আবুল হোসেন।
বর্ষা মৌসুমে ৪ মাস ভাসমান নৌকার কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে হাটটি জমজমাট হয়ে ওঠে সবচেয়ে বেশি। এখন শীত মৌসুমে দু’চারটি নৌকা ভাসমান হাটে নিয়ে আসেন আশপাশের বিক্রেতারা। কিন্তু তা কেনার মতো তেমন ক্রেতা পাওয়া যায়। তবে বাজার-সদাই থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর কেনা-বেচার ধুম বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়।
আটঘরের এই ঐতিহ্যবাহী হাটটি ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার গ্রামীণ জনপদের কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার চাহিদা মিটিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।