জিডিপির তুলনায় দেশের বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয় অত্যন্ত কম। বীমা দাবির অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়িমসি আর প্রতারণায় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে বীমা খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ বীমাখাতের প্রিমিয়াম আয়। যেখানে ভারত ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১ দশমিক ২ শতাংশ, ফিলিপাইনে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্রিমিয়াম মাত্র ৯ ডলার। বীমা খাতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম বলে জানান বক্তারা।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বাড়লেও বীমাখাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে না। অন্যদিকে ৭৮টি বীমা প্রতিষ্ঠানে চলছে প্রতিযোগিতার নামে নানা অনৈতিক চর্চা। ইমেজ সংকট আর তুলনামূলক কম বেতনের কারণে বীমা খাতে মেধাবী জনবল আসছে না বলে মনে করেন প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম।
তার মতে, এ খাতে শুরুতে নেতৃত্ব দিয়েছে অপেশাদার ও অদক্ষ মানুষ। তাই অনৈতিকতা জেঁকে বসেছিলো, যা এখনো আছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। দেশের সবগুলো বীমা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য সিইও এখনো নিয়োগ দেয়া যায়নি। মেধাবীরা এ খাতে আসতে চায় না, বিশেষায়িত শিক্ষার ব্যবস্থাও কম।
জালালুল আজিম বলেন, অতিরিক্ত কমিশনের চাপ থেকে বীমা খাতকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এজেন্ট ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইব্রাহীম হোসেন বলেন, দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ পলিসি খোলা হয় তার ৪০ শতাংশই মেয়াদ শেষ করে না বা তামাদি হয়ে যায়। এতে বীমাকারী ও প্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রাহকরা এসব ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ টাকা পায় বড়জোর, তাদের অসন্তোষ জমা হয়। এই নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ে।
বীমা খাতের উন্নয়নে প্রথমবারের মত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, চলমান নানামুখী সংস্কারের কাজ শেষ হলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত হবে বীমা। জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে হবে বীমা কতটা জরুরী ও উপকারী।
বিভিন্ন কাজে বীমাকে বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি দেশব্যাপী সচেতনতা তৈরি হলে এ খাতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করেন আলোচকরা। তাদের মতে, সচেতনতা বাড়ানো গেলে নির্মাণ শ্রমিক, পোশাক খাত, কৃষি, শিক্ষার্থীসহ সকল স্তরে বীমা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য দেশের জীবন বীমার ৩০ শতাংশই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ অ্যালিকোর দখলে। এছাড়া আমদানি-রফতানি পর্যায়ের বড় অংকের বীমা বিদেশি কোম্পানিতে করা হয়, এতে প্রচুর অর্থ বিদেশে যাচ্ছে বলে জানান আলোচকরা।