ঘন কুয়াশায় ফেরি আটকে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতগামী যাত্রীদের। ভারত ফেরত যাত্রীরাও একই দুর্ভোগের কবলে পড়ছেন। যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে রাতে রওনা দিয়ে পরের দিন ভোরে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও এখন তা আসছে বিকেল, কখনো সন্ধ্যায়। ফলে যাত্রীরা সময়মতো ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ভারতগামী যাত্রী সাবিনা জানান, ৮ ঘণ্টার মধ্যে বাসযাত্রী নিয়ে বেনাপোল পৌঁছানোর কথা, কিন্তু এল ২০ ঘণ্টায়। দিনভর খাওয়া, ঘুম, গোসল কোনোটাই নেই। দীর্ঘ এ সময় ছোট ছেলেমেয়েদের কোলে নিয়ে সিটে বসে থাকা চরম ভোগান্তি।
ভারতফেরত যাত্রী শাহিন রহমান বলেন, তিনি ব্যবসার কাজে ভারতে গিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরতে এখন বেনাপোলে এসে কোনো বাস পাচ্ছেন না। কুয়াশার কারণে এখনো ফেরিঘাটে সব বাস আটকে আছে। জরুরি দরকার থাকলেও দ্রুত যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
ভারতগামী যাত্রী বাবলু ঘোষ জানা, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। ডাক্তারের সিরিয়ালও দেওয়া হয়েছিল। ভোর ৬টার মধ্যে তাদের বাস বেনাপোল বন্দরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু আসতে পারেনি। ডাক্তারের সিরিয়াল বাতিল হয়েছে। আবার তিন দিন ডাক্তার পেতে অপেক্ষা করতে হবে।
বেনাপোল সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, কুয়াশার কারণে ফেরিঘাটে বাস আটকে থাকছে। সকাল ১০টার পর ফেরি ছাড়ছে। এরপর রাস্তায় যানজট। গন্তব্যে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এতে চালক, যাত্রী সবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
যশোর আবহাওয়া অফিসের সার্জেন্ট সাহাব উদ্দীন জানান, শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, অফিস নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৬টায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ হয়। করোনাকালীন সময়ে ভারতে প্রবেশে ও ভারত থেকে ফেরার পথে ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ সনদ দরকার হচ্ছে। বর্তমানে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় যাত্রী যাতায়াত বেশি।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) আতিকুল ইসলাম জানান, দিনভর যে যাত্রী যাতায়াত করে স্বাভাবিক সময়ে তার ৬০ শতাংশ যাত্রী সকাল ১০টার মধ্যে ভারতে প্রবেশ করে। তবে কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীরা সময়মতো বেনাপোলে পৌঁছাতে পারছেন না। ২২ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাত্র ৭৫ জন ভারতে প্রবেশ করেছেন।
উল্লেখ্য, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিকিৎসা, ব্যবসা এবং ভ্রমণে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৭ লাখ যাত্রী ভারতে যান। ভ্রমণ খাতে সরকারের ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আসে। ২০২০ সালে বেনাপোল দিয়ে তিন লাখ চার হাজার ৫০০ জন দেশি-বিদেশি পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে প্রবেশ করেছেন। ভ্রমণ-কর বাবদ আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।