‘আমার যা সাজা হবার তা দেন, আলহামদুল্লিাহ। এমন কাজ আমার দ্বারা আর হবে না। এটা একটা অপরাধ। অরা মাইরা ফালাইছে, কিভাবে মারে তা আমি জানি না। আমি সুন্দরবনে ১২ থেকে ১৩ বছর বনজীবী হিসাবে কাজ করি। অহিদুল নামের একজন আমাকে চামড়া দিয়েছে। আমি অশিক্ষিত গরীব মানুষ, ভুল করে লোভে পড়ে এই চামড়া নিয়েছি। এছাড়া আমি বেশি কিছু জানি না। আমি বুঝলে এরকম কাজ কহনো করতাম না।’
এভাবেই আকুতির সুরে অকপটে কথাগুলো বলছিলেন র্যাবের হাতে আটক হওয়া গাউস ফকির নামে এক বনজীবী।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে বাঘের চামড়াসহ আটক গাউস ফকিরকে বাগেরহাট বন বিভাগের অফিসে আনা হয়। সে সময় উপস্থিত সকলের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার রায়েন্দা বাজারস্থ বাসস্টান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে বন বিভাগ ও র্যাব-৮ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়।
বন্যপ্রাণী নিধন আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে মামলা দায়েরপূর্বক গাউস ফকির ও চামড়া আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আটক গাউস ফকির শরণখোলা উপজেলার দক্ষিন সাউথখালী এলাকার মৃত রশীদ ফকিরের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি গাউস ফকির একটি বাঘের চামড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন। ক্রেতা সেজে চামড়াটি ক্রয়ের জন্য গত তিন চার দিন ধরে গাউসের সাথে যোগাযোগ করি। গাউসের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে দর কষাকষি শেষে ১৩ লক্ষ টাকা চুক্তিতে চামড়াটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী র্যাব-৮ এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। টাকা দিয়ে চামড়া নেওয়ার সময় মঙ্গলবার হাতেনাতে গাউস ফকিরকে আটক করা হয়।
আদালতের নির্দেষনা অনুযায়ী চামড়াটির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি গাউস ফকির একজন শিকারি। গাউস ফকির এর আগে এ ধরনের কাজ করেছে কিনা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তবে ফকির বাড়ির লোকজন এর আগে এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানান তিনি।
কিভাবে বাঘ হত্যা করা হয় এবং বাঘের চামড়া কোথায় যায় এমন প্রশ্নে ডিএফও মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা যতদূর জানি এই দুষ্ট লোকেরা খাবারের সঙ্গে চেতনানাষক ঔষধ খাইয়ে বাঘ মারে। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তারা বাঘের চামড়াটিকে লোকালয়ে নিয়ে আসেন। এই বাঘের চামড়াগুলো বেশিরভাগ সময় ঢাকার বিভিন্ন এজেন্সির কাছে বিক্রি করা হয়। আসলে তারা দেশের বাইরে পাচার করে অনেক দামে। আবার দেশের মধ্যেও বিক্রি হতে পারে।