ভাবলাম চাচার বয়স হয়তো ৭৫-৮০ হবে! কিন্তু চাচার বয়স আরও অনেক কম। চাচি নিজের স্বামীকে এত বয়স্ক মানতেও নারাজ! চাচাকে বললাম, রিকশা চালিয়েন না! চাচা বললেন, অনেক দিনের অভ্যাস না চালালে অসুখ-বিসুখ তাকে আঁকড়ে ধরবে! মনের সঙ্গে রিকশার কোথাও সংযোগ রয়েছে বলে মনে হলো। তাই বাধা দিয়ে মনোবেদনার কারণ হতে চাইলাম না!
চাচার দুই ছেলে ও মেয়ে আছে। বড় ছেলে চাচার সঙ্গেই থাকেন। মোটামুটি কষ্টে-সৃষ্টে চলে যায় তাদের সংসার। তবে গ্রামে তারা প্রায় সবাই কমবেশি ঋণগ্রস্ত থাকেন। এটা কয়েকজনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। মন বারবার চেয়েছে চাচা রিকশা চালানো বন্ধ করে দিক, কিন্তু চাচার মনের চাওয়া ভিন্ন, তিনি রিকশা চালাবেনই। অনেকেই তাকে ভালোবাসেন, রিকশা চালালে তাদের সঙ্গে দেখাও হয়।
সবচেয়ে বড় ও ভালো লাগার বিষয়, চাচা এবং চাচি দুজনই অনেক অ্যাকটিভ এবং আমাদের শহরের অনেকেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে হাঁটাচলায় পারবেন না বলে আমার বিশ্বাস। রিকশা চালাতে চাচাকে কেউ বাধ্য করেনি, তিনি স্বেচ্ছায় চালান। রিকশা গ্যারেজের মালিক, নামমাত্র ৩০ টাকা নেন চাচার কাছ থেকে। অনেকে ভালোবেসে চাচাকে ভাড়া বাড়িয়ে দেন, অনেকে একসঙ্গে বসে খাবারও খাওয়ান।
এত ভালোবাসা একসঙ্গে উপেক্ষা করার শক্তি চাচার নেই, তাই তার রিকশা চালানোর অভ্যাস চলমান থাকবে। চাচার সঙ্গে প্রায়শই দেখা না হলেও কথা হবে। আরেকটা কথা চাচার সঙ্গে কারো দেখা হলে জোরে জোরে কথা বলবেন, চাচা কানে একটু কম শোনেন।
লেখক : এডিসি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর।