ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের তানিয়া আক্তার। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) গৃহকর্মীর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। এ সময় তানিয়ার গৃহকর্ত্রীকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন।
পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় গৃহকর্ত্রীকেও। মরদেহ নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সটিও জব্দ করে পুলিশ।
স্বজনরা জানায়, ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়নের মারুয়াখালী গ্রামের তোতা মিয়ার মেয়ে তানিয়া আক্তার (১৭)। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তানিয়া। তানিয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর। অসুস্থতার কারণে কয়েক মাস ধরে কাজে যেতে পারেন না। সংসারের চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে পরিবারটির। পরে পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে তানিয়া পাশের গ্রামের আবদুল কাদিরের সহায়তায় ঢাকার বনানীর এক বাসায় ছয় হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজে যোগ দেয়। তিন মাস আগে কাজ যোগ দিয়ে আড়াই মাসে বাবার বিকাশ নম্বরে মাত্র ৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল তানিয়া। কিন্তু আর টাকাও পাচ্ছিল না পরিবারটি।
গত শুক্রবার দুপুরে তানিয়ার বাবার মোবাইলে গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহার ফোন করে তানিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত তাকে বনানী আসতে বলেন। মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে পরিবারের লোকজন রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় যেতেই বিকেলে ফের ফোন আসে তানিয়ার বাবার ফোনে। বলা হয় তানিয়াকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ওই সময় তানিয়ার বাবা তাদের অবস্থানের কথা জানালে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে এসে থামে পরিবারটির কাছে। ভেতরে দেখেন তানিয়ার নিথর দেহ। সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহার। সেখান থেকে গৃহকর্ত্রী পালিয়ে যেতে চান। পরে কৌশলে তাকে তানিয়ার বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে এলাকার লোকজন গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহারকে একটি ঘরে আটকে রেখে খবর দেয় আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে লাশ উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তানিয়াকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ও চালককে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানিয়ার গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহারকেও আটক করে পুলিশ।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে অসংলগ্ন তথ্য দেন বদরুন নাহার। নিজের সঠিক পরিচয় সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের কাছে প্রকাশ করেনি ওই নারী। তানিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডায়রিয়া হওয়ার কথা বলেছেন বদরুন নাহার।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের মিয়া জানান, লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হবে। গৃহকর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।