কুমিল্লায় পথশিশুদের মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলছে। জিলা স্কুলে ভর্তি হতে আসা নবীণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনেই পথশিশুদের মাদক সেবন করতে দেখা যায়। এছাড়া শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ছিন্নমূল শিশুদের দলবেঁধে মাদক গ্রহণের অপ্রত্যাশিত চিত্র। যাদের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
নগরীর ধর্মসাগর পশ্চিমপাড়, জিলা স্কুলের দক্ষিণ গেট, টাউনহল মাঠ, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ওভারব্রিজ, জাঙ্গালিয়া ও শাসনগাছা স্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা যায় পথশিশুরা প্রকাশ্যে এক ধরনের মাদক (ড্যান্ডি) সেবন করছে।
জানা গেছে, দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নেশাজাতীয় রাসায়নিক বস্তু নাম ড্যান্ডি। যা মূলত ড্যানড্রাইড অ্যাডহেসিভ বা আঠালো টলুইন সমৃদ্ধ। এই অ্যাডহেসিভ মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, ডিভাইস, চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলত ড্যান্ডি আঠা তীব্র ঘ্রাণযুক্ত এবং ঘ্রাণ থেকেই এক ধরনের আসক্তি হয় যা দেহের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এ শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই ও মাদক বিক্রির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে। অসাধু ব্যবসায়ী ও মাদক বিক্রির সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই স্বল্পদামে পথশিশুদের হাতে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।
পথশিশুদের নিয়মিত পাঠদান ও বিনোদন দিয়ে আসা সংগঠন ‘দুর্বার ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোক্তা আরিফ চৌধুরী জানান, এ শিশুরা বিপথগামী হওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই। বেঁচে থাকার অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। তাছাড়া করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিশুই আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ছিটকে পড়েছে। যার ফলে শহরের আশেপাশে পথশিশুদের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সন্তানকে কুমিল্লা জিলাস্কুলে ভর্তি করাতে আসা অভিভাবক জাকারিয়া ইসলাম বলেন, ছোট্ট শিশুদের সামনে এভাবে মাদক সেবন শিশুদের মনকে আরও কৌতূহলী করে তুলতে পারে, যা তাদের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলবে। একজন অভিভাবক হিসেবে পথশিশুদের প্রকাশ্য মাদক গ্রহণ বন্ধে প্রশাসনের শুভদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, পথশিশুরা মাদক সেবন করছে, এটা নিঃসন্দেহে নেতিবাচক দিক। তাছাড়া পথশিশুদের সঠিক তথ্য ও সঠিক সংখ্যা না থাকাটাও সমস্যা সমাধানে একটা সমস্যা হতে পারে। পথশিশুদের এভাবে মাদক সেবন বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।