লিখিত নোটিশ ছাড়াই শ্রমিকদের চিনিকলে না আসার নির্দেশ দিয়েছেন রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) চিনিকলের কারখানা বিভাগের ৯২ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুতির কথা জানিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল কবির। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তাদের আর কাজে যোগ দিতে হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
শ্রমিকরা বলছেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের প্রজ্ঞাপনকে পাশ কাটিয়ে, কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। গত ২০ ডিসেম্বর কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয় বন্ধ ঘোষিত চিনিকলগুলোর কোনো শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বছরের শেষ দিনে চিনিকল কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশনায় ৯২ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির কথার জানানো হল।
রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসেন ফটু বলেন, বিষয়টিকে শুধু অমানবিকই নয়, চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, চিনিকল আধুনিকায়নের জন্য রংপুর চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে মাড়াই বন্ধ হলেও এখানকার কাউকে ছাঁটাই করা হবে না, যথাযথ বেতন/মজুরি প্রদান করা হবে বলে বিএসএফআইসি’র চিফ অব পার্সোনাল মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। সেটি প্রেসরিলিজ আকারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করাও হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো প্রকার নোটিশ বা চিঠি না দিয়ে চিনিকলের ৯২ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুত করতে পারে না কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ নিয়োগ বিধি মেনে চাকরি পাওয়া এতগুলো মানুষকে পথে বসানোর অধিকার কারও নেই।
কারখানার স্টোর বিভাগের ক্লার্ক-কাম-স্টোর কিপার ওবায়দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞাপন মোতাবেক সদর দপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের কাছে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। এখন কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের চাকরি নেই বলে জানানো কোনোভাবেই উচিৎ নয়।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল কবির জানান, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেকই কারখানার ‘কানামনা’ (কাজ নাই, মজুরি নাই) ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ৯২ জনকে কাজে আসতে না করা হয়েছে। মাড়াই বন্ধ থাকায় যেহেতু কারখানা চলছে না, সে জন্যই তারা বাদ পড়েছেন। শনিবার এ বিষয়ে চিনিকলের বোর্ডে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই চাকরিতে বহাল রাখা সম্ভব নয়। তবে চিনিকল আবার চালু হলে চাকরি হারানোদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে।
এ দিকে রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল টেলিফোনে জানান, চিনিকলের বিষয় নিয়ে ঢাকায় মিটিং-এ থাকা অবস্থায় অন্যায় ভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।