একসঙ্গে তো মাঠে নামতে হয় ১১ জন ফুটবলারের! পেশাদার ফুটবলারদের বছরের পর বছর ধরে খেলতে হয় অনেক ফুটবলারের সঙ্গে! লিওনেল মেসির কথাই ধরুন। ২০ বছর হলো আর্জেন্টিনার রোজারিও ছেড়ে বার্সেলোনায় এসেছেন। লা মাসিয়ায় ছোট ছোট পা ফেলে শিখেছেন ফুটবলের আদ্যোপান্ত। ন্যু ক্যাম্প থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজের নাম। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে বয়সটা ১৭ ছাড়ালো। এরমধ্যে কতোজন এলেন-গেলেন! লিওনেল মেসি রয়ে গেলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তার সঙ্গী হয়েছেন অসংখ্য ফুটবলার, অর্জন, উচ্ছ্বাস, হতাশা।
সঙ্গে রচিত হয়েছে একটা বন্ধুত্বের গল্প।
মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার। 'এমএসএন' ত্রয়ীর কথাও গোটা ফুটবল দুনিয়া জানে। তাদের বন্ধুত্বের কথাও জানে। সেই বন্ধুত্ব কতোটা গভীর, সেটা কি কেউ আঁচ করতে পারে?

তিনজনই একসঙ্গে খেলেছেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায়। গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ড লাইন। তবে বন্ধুত্বের শিকড়টা বোধহয় আরো গভীরে। তিনজনই ল্যাতিন আমেরিকার ফুটবলার। খুব সম্ভবত সাংস্কৃতিক মিল থেকেই, তিনজন একজন-আরেকজনকে বোঝেন বেশ! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চিরবৈরিতা ভুলে মেসি একেবারে আপন করে নিয়েছিলেন নেইমারকে। উরুগুইয়ান তারকা লুইস সুয়ারেজও তার আত্মার আপন।
এরা দু'জন মেসির কতোটা আপন? ২০১৭ সালে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি'তে বার্সা ছেড়ে ফরাসী ক্লাব পিএসজিতে পাড়ি জমান নেইমার। সেবার মেসির কি যে রাগ! ক্লাব কেন তাকে যেতে দিল? আবার কেন নিয়ে আসছে না? এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ক্লাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। সবশেষ তো আজন্ম প্রিয় ক্লাবটাও ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিলেন!
চলতি মৌসুম শুরুর আগে কাতালান শিবির ছেড়ে গেছেন লুইস সুয়ারেজ। বলা যায়, ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাতেও নিজের রাগ-ক্ষোভ সব উগরে দিয়েছেন খোলাখুলি। এবার মেসি জানালেন আরো একটি তথ্য, সুয়ারেজের বিদায় আসন্ন দেখে, তার আগেই ক্লাব ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন ক্ষুদে জাদুকর।
স্প্যানিশ গণমাধ্যম লা সেক্সটাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, 'সুয়ারেজের বিদায়ের আগেই আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম। ওর বিদায়টা খুবই হতাশাজনক ছিল। সে যেভাবে এখান থেকে চলে গেছে সেটা কোনভাবেই আমার পছন্দ হয়নি। এভাবে বিদায় নেয়াটা তার প্রাপ্য নয়।'
একটা গোপন তথ্যও দিলেন ৬ বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী তারকা। মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার, তিনজন মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে গড়ে তুলেছেন একটি গ্রুপ। সেখানে নিয়মিতই আড্ডা চলে তিন বন্ধুর।

মেসি বলেন, 'আমরা প্রতিদিন কথা বলি। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিয়ে নেইমারের সঙ্গে কথা বলেছি। লিগের ড্র'টা আমার পছন্দ হয়নি। নেইমারেরও না। আমরা একে-অপরকে এত দ্রুত ফেইস করতে চাইনি। আমি সুয়ারেজের সঙ্গেও প্রায় প্রতিদিনই কথা বলি। আমাদের তিনজনের মধ্যে খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক আছে'।
বিভিন্ন সময়ে সুয়ারেজ তাদের বন্ধুত্বের বিষয়ে নানা আবেগি কথা বলেছেন। নেইমার তো বেশ কয়েকবার মুখ খুলেছেন। একবার বলেছেন, 'আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর প্রাপ্তিগুলোর একটি এই বন্ধুত্বটা। বার্সেলোনায় আমি সবচেয়ে বেশি মিস করি এই দু'জনকে। প্রতিদিন আমরা যে পরিমান আনন্দ করতাম, সেটা খুব মিস করি।'

সম্প্রতি সরাসরি বলে দিয়েছেন, 'এই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে বেশি করে যেটি চাই সেটি হচ্ছে মেসির পাশাপাশি আরেকবার খেলার সুযোগ। যে কোন মূল্যে এবং আগামী বছরের মধ্যেই।'
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র যখন হলো তখনও মেসির সঙ্গে ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, 'শীঘ্রই দেখা হবে বন্ধু'।
কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে! যেটি পছন্দ নয় দু'জনের কারোই। তারা চান মাঠে একসঙ্গে লড়তে। পাশাপাশি থাকতে। তবে বার্সেলোনায় সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না, এটুকু নিশ্চিত।
মেসি বলেন, 'নেইমারকে কেনার সামর্থ্য এখন বার্সেলোনার নেই এটা আমিও জানি। এত টাকা কোথায় পাবে বার্সা? পিএসজিকে আমরা কীভাবে রাজি করাবো'?
সম্ভাব্য একটা পথই খোলা। মেসির পিএসজিতে যাওয়া। সেই সম্ভাবনার পালে জোর হাওয়া আছে। গুঞ্জন দিনেদিনে বাড়ছে। এই গ্রীষ্মেই চুক্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হচ্ছেন মেসি। কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন, মৌসুম শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করবেন না তিনি। কিন্তু মৌসুম শেষে যে আর থাকবেনও না বার্সায়, সেটাও আর অজানা নয়।
আরেক বন্ধু সুয়ারেজের সঙ্গে আর হয়তো খেলা হচ্ছে না পাশাপাশি। প্রশ্নের জবাবে মেসি সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, রিয়াল কিংবা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে খেলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার।
যাই হোক, ৩ জনের বন্ধুত্বের পুরোপুরি সুফল ভোগ করেছে ক্লাব বার্সেলোনা।

তাদের বোঝাপড়া ছিল দুর্দান্ত। তাদের সমন্বয়ে বার্সার আক্রমনভাগ ছিল ভয়ংকর। ২০১৪ থেকে ২০১৭, এই তিন বছরে ৪৫০ ম্যাচে এই তিনজনই করেছেন ৩৬৪ গোল। দলকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ বেশকিছু ট্রফি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সা জিতেছিল ট্রেবল।
সবই এখন স্মৃতি!
জগতে অনেক অকল্পনীয় ব্যাপারই তো ঘটে। তিন বন্ধুকে কি মাঠে আবারো এক ফ্রেমে মিলিয়ে দিবে কেউ? কে জানে!