নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী ঐতিহাসিক আতাইকুলা বধ্যভূমি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শহীদের আত্মদান স্মরণে বধ্যভূমি সংরক্ষণ, শহীদদের নাম সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের পরিবারকে মূল্যায়ন ও সাহায্যের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচবছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করেন। এরপর শহীদ পরিবারের সদস্যরা ইটের প্রাচীর দিয়ে বধ্যভূমিটি ঘিরে রাখেন। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। ২০১৫ সালে এটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে আগামী প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল যমুনা নদী পার হয়ে এখানে আসে হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামে রয়েছে সন্দেহে তারা প্রথমে গ্রামটি ঘিরে ফেলে। পরে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নেয়া হয়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় পুরুষদের। আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রেখে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো পুরুষদের ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এতে মুহূর্তেই শহীদ হন ৫২ জন।
নির্যাতিত নারী ও স্বজনদের হৃদয়বিদারক আর্তনাদ ও কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল সেদিন। গুলিবিদ্ধ হয়েও কোনোভাবে বেঁচে যান প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।
প্রদ্যুত পাল বলেন, ওই দিন তার বাবা, কাকা, জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাকেও সারি করে দাঁড় করানো হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কোনো রকমে বেঁচে সে বাড়িতে ফিরে যায়। শহীদদের রক্তে সেদিন আত্রাই নদীর পানি লাল হয়েছিল।
শহীদ গোবিন্দ চরণ পালের ছেলে গৌতম পাল বলেন, অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বধ্যভূমি সংস্কারে নির্দেশনা আসে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হওয়ায় এখনও কোনো সংস্কার হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই আট শতাংশ জমি বধ্যভূমিতে দান করেছি। দ্রুতই বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হলে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগ জমি অধিগ্রহণের কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত বধ্যভূমির সংস্কার ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।