৬ ডিসেম্বর (রোববার) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। দিবসটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন, আখাউড়া পৌরসভা ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
কর্মসূচির মধ্যে আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন ও আখাউড়া মুক্ত দিবস বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে রোববার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় আখাউড়া কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সকাল সোয়া ১০টায় আখাউড়া পোষ্ট অফিসের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে আখাউড়ার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক জনতা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে আখাউড়ায় গঠন করা হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী ওয়াহেদুর রহমান লিলু মিয়া।
এস ফোর্সের অধিনায়ক লে. কর্নেল সফিউল্লাহর তত্ত্বাবধানে এই যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধকালীন ৩০ নভেম্বর ও পহেলা ডিসেম্বর আখাউড়া উত্তরে সীমান্তবর্তী আজমপুর, রাজাপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। টানা ৩ দিন চলে এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধ অন্তত ৩৫ পাক সেনা নিহত হয়। বন্দী করা হয় ৫ জনকে। মুক্তি বাহিনীর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান এ সময় শহীদ হন। আহত হয় অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের মারমুখী আক্রমণে পাক বাহিনী দাঁড়াতে পারেনি। তারা তখন পিছু হটতে শুরু করে। পরে ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী আজমপুরে অবস্থান নিলে সেখানেও যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১১জন সেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ২ সিপাহী ও ১ নায়েক সুবেদার শহীদ হন।
৪ এবং ৫ ডিসেম্বর অবিরাম যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৭০ জন সেনা নিহত হয়। তখন গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়। আখাউড়ার খরমপুর, দেবগ্রাম, তারাগন, নয়াদিল, দরুইন, টানমান্দাইল, গঙ্গাসাগর, কর্ণেল বাজার, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়া দরুইনের মাটিতেই শহীদ হন।
আখাউড়া মুক্ত হওয়ার পর আখাউড়ার প্রধান ডাকঘরের সামনে সর্ব প্রথম বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী। এসময় মেজর আইন উদ্দিনসহ মিত্র বাহিনীর কর্মকর্তাসহ মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।