হিন্দু নারীকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টার অভিযোগে ভারতের উত্তর প্রদেশের পুলিশ এক মুসলমান যুবককে গ্রেফতার করেছে।
রাজ্যে সদ্য পাস হওয়া ‘লাভজিহাদ’ ঠেকাতে ধর্মান্তরবিরোধী আইনের অধীনে প্রথম কোনো মুসলমানকে গ্রেফতারের ঘটনা এটি। ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীগোষ্ঠীর অভিযোগ, মুসলমান যুবকরা বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করছে।
হিন্দু নারীর ইসলাম ধর্ম গ্রহণকে কট্টরপন্থিরা ‘লাভজিহাদ’ নামে অভিহিত করে, যা ঠেকাতে ধর্মান্তরবিরোধী আইন করে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশ সরকার।
এ আইনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা চলছে। একে ইসলামবিদ্বেষ আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের আরও চারটি রাজ্য লাভজিহাদের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করছে।
বুধবার উত্তর প্রদেশের বেরেলি জেলা পুলিশ টুইট বার্তায় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
গত সপ্তাহে ওই হিন্দু নারীর বাবা পুলিশের কাছে ওই মুসলমান যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। বলা হয়, তার মেয়েকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা না করলে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হিন্দু ওই নারীর অভিযোগ, মুসলমান ওই যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ওই নারী অন্য একজনকে বিয়ে করে।
বুধবার আটকের পর অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জন্য জুডিশিয়াল কাস্টডিতে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত বলেন, তিনি নিরপরাধ; ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
নতুন আইনে ধর্মান্তরিত করার অপরাধের শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। এ ক্ষেত্রে জামিনের কোনো সুযোগ নেই।
লাভজিহাদ আইন কি?
নভেম্বরে উত্তর প্রদেশ প্রথম রাজ্য হিসেবে জোরপূর্বক বা প্রতারণাপূর্বক ধর্মান্তরবিরোধী আইন পাস করে। শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, মধ্যপ্রদেশ, হারিয়ানা, কর্ণাটক এবং আসাম সরকারও লাভজিহাদের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে।
পাঁচটি রাজ্যই কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার পরিচালনা করছে। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দেশজুড়ে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বোঝাচ্ছে মুসলিম বিরোধিতা স্বাভাবিক ঘটনা।
‘লাভজিহাদ’ ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো পরিভাষা নয়। কট্টর ডানপন্থি উগ্রবাদী হিন্দুগোষ্ঠীগুলো এটি ব্যবহার করে। বিশ্লেষকরা এ আইনকে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল এবং আপত্তিকর অভিহত করেছেন। আইনের অপব্যবহার এবং এর মাধ্যমে হয়রানি হতে পারে বলে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
অক্টোবরে ভারতের একটি জনপ্রিয় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আন্তধর্মীয় যুগলের ভালোবাসার একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে। দুই ধর্মের নারী পুরুষের মধ্যে এমন ভালোবাসা দেখানোকে ভালোভাবে নেয়নি কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের অভিযোগ বিজ্ঞাপনে লাভজিহাদের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আক্রমণাত্মক সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহারে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি, যা নিয়ে গত দু’মাস ব্যাপক তোলপাড় ছিল বিভিন্ন মাধ্যমে।
নভেম্বরে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধেও একটি অভিযোগ তোলে কট্টরবাদীরা। তাদের ‘এ সুইটেবল বয়’ সিরিজের একটি দৃশ্যে দেখানো হয়, একজন হিন্দু নারী এবং একজন মুসলমান পুরুষ একে অপরকে চুমু খাচ্ছে; তারপরই ক্যামেরা ঘুরিয়ে মন্দির দেখানো হয়।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নরোত্তম মিশরা বলেন, এ দৃশ্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। সিরিজের প্রযোজক এবং পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কর্মকর্তারা।
বিজেপির সমালোচকরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়তে থাকে। হিন্দু-মুসলমান বিয়েকে সবসময় ভর্ৎসনা করা হয়। কিন্তু এখন বিজেপি ইস্যুগুলোকে রাজনীতিকরণ করে ধর্মীয় বিভেদ আরও জোরালো করছে।