ঢাকা, বিশ্বে সবচেয়ে জনবহুল শহরের একটি। তাই জনঘনত্ব বিবেচনা করে ভবনের উচ্চতা ও ফ্লোরের অনুপাত ঠিক করতে হবে। শহরের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম ও ভূমির ব্যবহারও সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স- বিআইপি আয়োজিত ঢাকা মহানগরীর অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এতে সংগঠনটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান।
এসময়, শ্রমজীবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিতে স্থান নির্ধারণসহ সব কিছু বিবেচনা করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করারও তাগিদ দেয়া হয়। তবে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবল দিয়ে এই ধরনের বড় পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব না বলেও মনে করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ভূমির মিশ্র ব্যবহারে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান- ড্যাপে যা বলা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক অবকাঠামো ও কার্যক্রমের মিশ্র ব্যবহার ১০ থেকে ২০ শতাংশের বেশি হলে আবাসিক এলাকার জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা ও পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়বে; বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ হবে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়ে বিশদ এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে।
ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোন ধরনের শিল্প কারখানা কোথায় হবে সেটি নির্ধারণ করতে হবে ও শিল্প এলাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে ভারী শিল্প সরাতে হবে। কারণ, শুধু শিল্প করলেই হবে না, রাজধানীবাসীর আবাসন সুবিধাও ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত গণশুনানিতে অংশীজনের গঠনমূলক ও যৌক্তিক মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১৬-৩৫) চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন তারা। একটি ভালো পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে। তাহলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ঢাকাকে একটি প্রতিযোগী নগরী হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব বলেও মনে করে বিআইপি।
সংগঠনটির অভিযোগ, নগর পরিকল্পনাবিদদদের কোন টুলস দেয়া হয় না, এমনকি কোন এলাকার ম্যাপ না দিয়েই পরিকল্পনা করতে বলা হয়। আর পরবর্তীতে পরিকল্পনাবিদদের পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে বলে তা বাতিল করা হয়।
রাজউকের নিয়ন্ত্রণকারী ও উন্নয়নকারী ভূমিকাকে পৃথক করে টাউন ইমপ্রুভম্যান্ট অ্যাক্টের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। রাজউক বোর্ডকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। আর সরকারের এসব কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা।
এছাড়া, রাজধানীর আশপাশের নগর কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা এবং দেশের সব বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও পৌরসভা, উপজেলা শহরে কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে বলেও যুক্তি উঠে আসে তাদের আলোচনায়।