অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে বাজেটে সরকার ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এই সুযোগ নিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৩৫৮ জন। আর এতে সরকার পেয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। কালো অর্থনীতির আকারের বিপরীতে এই অর্থ নগণ্য বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশে কালো অর্থনীতির আকার মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি বলেই জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। এই অর্থকে অর্থনীতির মূল ধারায় ফেরাতে প্রতি সরকারই দিয়েছে সাদা করার সুযোগ। সবশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, ফ্ল্যাটের আকার অনুসারে নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র শেয়ার, বন্ডের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। বলা হয়, যারা এই সুযোগ নেবেন তাদের টাকার উৎস নিয়ে কোনও কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের হিসাব বলছে, গত পাঁচ মাসে ৪ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। এ সময়ে, ৩ হাজার ৩২০ জন করদাতা ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কর দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে সাদা করেছেন। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কালোটাকা সাদা করেছেন মাত্র ১৩৮ জন; যারা কর দিয়েছেন ১৮ কোটি টাকা।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ফাঁস ও হয়রানির আশঙ্কায় অধিকাংশ কালোটাকার মালিকরা এই সুযোগ নিচ্ছেন না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ'র জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কালোটাকা সাদা করার সঙ্গে একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার জড়িত। অনেকেই ওই আস্থাটা পান না যে, এখন হয়তো জিজ্ঞাসা করছে না কিন্তু পরবর্তীতে আইনের মারপ্যাঁচে পড়বেন কিনা। এ ছাড়া সামাজিক একটা বিষয় আছে; যেখানে কালোটাকার মালিকরা তাদের অর্থ প্রদর্শন করলে হেয় হতে পারেন। এসব ধারণা থেকেই বারবার সুযোগ দেওয়া হলেও সেভাবে সাড়া মেলে না।
এনবিআরের সাবেক এক চেয়ারম্যান জানান, এই কালো টাকার মালিকরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। তাদের অর্থের পরিমাণ জানলে পরে যদি কোনও বিষয় সংশ্লিষ্টতায় দুদক আবার ধরে!
১৯৭৫ সালের পর এ পর্যন্ত ১৭ বার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা সাদা হয়েছে।