বাংলাদেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিরক্ত আলোচিত চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার।
এ নিয়ে রোববার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য তার সেই ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো।
'অনেক দিন ধরে সেকেন্ড ওয়েভ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়ে এই লেখাটি লিখছি।
প্রথম ওয়েভ কি?
প্রথম ওয়েভ হলো যে দেশে যেদিন প্রথম কোভিড ১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে সেদিন থেকে যেদিন সেই একই দেশে রোগী থেকে রোগীতে সংক্রমণের হার বা আর নট ১ বা তার কাছাকাছি পৌঁছায় অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী সংক্রমণের হার পরীক্ষার অনুপাতে শতকরা ৫ শতাংশের নিচে আসে।
যেসব দেশ প্রথম ওয়েভ শেষ করেছে তাদের কারো কারো ৫০ দিন, কারে আরো বেশি দিনও জিরো কেস ছিল।
বাংলাদেশে আর নট বা একজন রোগী থেকে গড়ে কতজনে এটা ছড়ায় সেটা আমরা এখনো জানি না।
আমরা এমন কোনো দিন কাটাই নাই যেদিন কোনো রোগী ধরা পড়ে নাই।
আমাদের টেস্ট অনুপাতে সংক্রমণের হার তেমন একটা কমেও নাই।
তাই আমাদের দেশে কোনো সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয় নাই।
সেকেন্ড ওয়েভ কাদের দেশে শুরু হয়?
যারা প্রথম ওয়েভকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ তারা লকডাউন, চিকিৎসা, আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এসব করেই রোগটিকে প্রথম ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
তাই সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করাতেও এরা বেশি সফল হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে কোনো সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয় নাই।
আমাদের ঢেউ প্রথমটাই চলছে। আর আমরা কি কি করেছি নিশ্চয় এত সহজে ভুলেন নাই।
নকল মাস্ক পিপিইর ব্যবস্থা করেছি।
ডাক্তারদের ধমকাধমকি করেছি।
লকডাউন মানি নাই।
লকডাউনের মধ্যে “সীমিত” সবকিছুই করেছি। গণপরিবহন খোলা রেখেছি। হাঁটিয়ে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকা আনা-নেওয়া করেছি। বলেছি, গবিবদের শক্তি আছে। শপিংমল খুলে ঈদে সীমিত শপিং করেছি। ঈদে বাড়ি যাতায়াত করেছি। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ইনফেকশনের এপিসেন্টার হওয়ার পরেও এখানে কোনো জোরালো ব্যবস্থা নেই। রাজাবাজার ওয়ারীতে হাস্যকর লাল নীল হলুদ সবুজ কাণ্ডকারখানা করেছি। জেকেজি সাহেদ জাতীয় চোরদের সুযোগ দিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পতে গাড়ির পার্টস বিক্রেতার কাছ থেকে সরঞ্জাম কিনেছি। কাঁচাবাজারের ফ্লোরে আইসোলেশন ইউনিট বানিয়েছি। গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করে পরের দিন সেটা প্রত্যাহার করেছি। পরীক্ষার কিট বানানো নিয়ে ও টিকা বানানো নিয়ে মহা হুলুস্থুল করেছি।
আমরা মাস্ক পরি না। স্বাস্থ্যবিধি মানি না। আমরা কারো কোনো কথা শুনি না।
তাই আমাদের কোনো সেকেন্ড ওয়েভ নেই।
আমেরিকাতে ডা. ফাউচিও বলেছেন সেখানেও কোনো সেকেন্ড ওয়েভ নেই। হয়তো একটা-দুটো স্টেটে আলাদাভাবে এটা বলা যেতে পারে। কিন্তু দেশ বিবেচনায় আমেরিকা প্রথম প্রবাহেই আছে।
আমাদের দেশে বয়স্ক জনসংখ্যা কম হওয়াতে মৃত্যুর পরিমাণ কম মনে হচ্ছে। আর চিকিৎসাও ভালো হচ্ছে। কিন্তু এটা দিয়ে প্রথম ওয়েভ শেষ হয়ে দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে এসব বলা যাবে না।
ওয়েভ প্রথম, দ্বিতীয়, না তৃতীয়, তার সঙ্গে আপনার শরীরে করোনা ঢোকার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার শরীরে ঢুকল মানে এটা প্রথম বার ঢুকল। আর এটা আপনাকে মেরে ফেলবে কিনা এটা ডাক্তাররাও শুরুতে বলতে পারে না। তারা ওষুধ দিয়ে ভরসা করেন আপনার শরীরের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ওষুধের ক্রিয়া ও আপনার শরীরে প্রতিক্রিয়ার ওপরে। সবার শরীরে একই ওষুধ সমান কাজ করে না।
ভালো করে পড়েন।
ওয়েভ প্রথম না দ্বিতীয় তার সঙ্গে আপনার আক্রান্ত হওয়া নির্ভর করে না। আপনার শরীরে ভাইরাস ঢুকল মানে প্রথমবার ঢুকল আর আপনার মৃত্যু হলে সেটা একবারই হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানেন।
হাত পরিষ্কার, মাস্ক পরিধান, নিরাপদ ব্যবধান।
আমার মামার বাড়িতে অবান্তর কথাকে বলে ''ছাতার মাথা'' বলা।
আমিও বলি, সেকেন্ড ওয়েভ এর নামে এসব ''ছাতার মাথ'' না বলে স্বাস্থ্যবিধি মানেন।'