মহামারি করোনার মধ্যেও প্রথমবারের মতো এবার আমন ধানের ভালো দাম পেয়েছেন উত্তরের কৃষকরা। কিন্তু কৃষকের এই অর্জনকে পুঁজি করেছেন চাল ও চালকল ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি চালে ৭ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা দাম পুনর্নির্ধারণের দাবিতে অটল তারা। এ জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানে চাল সরবরাহের চুক্তি থেকে বিরত আছেন তারা।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছর ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় প্রতিমণ ধান বেচে দীর্ঘশ্বাস ফেললেও এবার শুরু থেকেই ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে ধানের বাজার দর। কয়েক দফার বন্যা আর অতিবৃষ্টি মোকাবিলা করে ফলানো এবারের ধান মহামারি করোনার এই বিপন্ন-বৈরী সময়ে আশা জাগিয়েছে কৃষকের মনে।
ধানের ভালো দামে কৃষক খুশি হলেও একে অজুহাত হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন মিলাররা। প্রতি কেজিতে ৭ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা পুনির্নির্ধারণের দাবিতে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি থেকে বিরত আছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। চাল ব্যবসায়ী ফেরদৌস আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে যদি কেজিতে ৭ করে বাড়ানো যায়, তাহলে আমাদের পক্ষে চাল সরবরাহ করা সম্ভব।
চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য আলম হোসেন বাবু বলেন, এখানে সিন্ডিকেট বলে কিছু নাই। কারণ, আমার পাশের মিলে কি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে সেটাই আমি জানি না।
প্রতিকেজি ধানের উৎপাদন ব্যয় ১৭.৮৩ টাকা ধরে ধানের রেট ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি চালের উৎপাদন ব্যয় ২১.৯০ টাকা ধরে চালের রেট ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
কিন্তু মিলাররা ধানের অনুপাতে চালের কেজি ৪১ টাকা দাবি করে ক্রাসিং, পরিবহন ও বিবিধ খরচ হিসাবে আরও ৩ টাকা যুক্ত করে ৪৪ টাকা দাবি করছেন।
করোনার দ্বিতীয় আঘাতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের আশঙ্কা থেকে মিলারদের ভেতর অতি-ব্যবসায়িক মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, কিছু ব্যবসায়ী যারা অতিরিক্ত দামে কিনছেন ও মজুত করছেন।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপতর উপপরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, বাজার দরে তারা (ব্যবসায়ীরা) বিক্রি করতে রাজি না। তারা চান যে কীভাবে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকেই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত বাড়ানোর পরামর্শ রংপুর জেলা জাতীয় কৃষক সমিতি সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানির।
আমন মৌসুমে ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ২৬ টাকা কেজি দরে ২ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার ছিল চুক্তির শেষ দিন।