বাবা-মা সবই আছে, তবুও কাগজে-কলমে তারা এতিম। বাবাকে মৃত দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে অবস্থান করছেন এতিমখানায়। অভিযোগ উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হতদরিদ্র শিশু-কিশোরদের এতিম সাজিয়ে তাদেরই ব্যবহার করছে স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে।
সম্প্রতি রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় সৃষ্ট সংকটের অনুসন্ধানে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য পেয়েছে সময় নিউজের প্রতিবেদক।
সাম্প্রতিক আভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে ছুটি ঘোষণা করা হলে গত ২৬ নভেম্বর থেকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা ছেড়ে যেতে থাকে শিশু-কিশোররা। ওই দিন মুক্তা আক্তার নামের এক ছাত্রীকে নিতে এসে সত্যের মুখোমুখি হতে হয় অভিভাবকদের।
এতিম পরিচয় দিয়ে সেখানে অবস্থান করা মুক্তার বাবা বলেন, মুক্তা আমার আপন মেয়ে না। পরে সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে মুক্তার বাবা স্বীকার করলেন আমিই মুক্তার বাবা।
আর তার মা বলছে, আমি মুক্তার সৎমা। কোনও ব্যবস্থা করতে না পেরেই তাকে এখানে রেখে গেছি। এতিমখানায় এসে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে হয়তো ভুলেও ভাবেননি তারা।
আরও পড়ুন: ১২ হাজারে ছয়মাসের সন্তান বিক্রি করে পলাতক মা-বাবা
এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষক হারুণ অর রশিদ ও ইউসুফ মোল্লাকে গ্রেফতার করা হলে প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে এতিমরা। তাদের অধিকাংশের আচরণ ও কর্মকাণ্ড 'এতিমসুলভ' ছিল না বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। এরই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে সময় নিউজ।
তাদের মধ্যে একজন মোহনা আক্তার বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে এখানে অবস্থান করছেন। পরে সময় নিউজ মোহনা আক্তারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লক্ষারচর গ্রাম যায়। সেখানে গিয়ে দেখে, মোহনার বাবাও মৃত নন।
মোহনার বাবা বলেন, আমি তো জীবিত, তা আপনারাই চোখে দেখছেন। আমি মেয়েকে তার মামার কাছে রেখে এসেছি, তারা দেখভাল করবে বলে। এ জন্য আমি একটু দূরত্ব রেখেছি।
কীভাবে ঘটল এমন জালিয়াতির ঘটনা? মুখ খুলতে চান না সেই সময়ের দায়িত্বশীলদের কেউ। তবে এ বিষয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার উপসহকারী তত্ত্বাবধায়ক নূরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ভর্তির ফরম আসছে। আমি শুধু এন্টি করে দিয়েছি। এর বেশি কিছু জানি না।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন দিলেন অবাক করা তথ্য। জানালেন, এই এতিমখানার অধিকাংশ ছেলেমেয়েই এতিম নয়। তাদের বাবা-মা দুজন এখনও বেঁচে আছেন।
আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক এতিম পরিচয়ে এই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান ও পরবর্তীতে এখানেই চাকরি নেন অর্থ আত্মসাৎচক্রের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষক হারুণ অর রশিদ ও ইউসুফ আলী মোল্লা। সময়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তারাও এতিম নন।