কুমিল্লার দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের গোমতীর শাখা নদীর ওপর নির্মিত পাকা সেতুটি গত দুই বছর আগে ধসে নদীর পানিতে পড়ে। এরপর থেকে সড়কপথে এলাকার মানুষের সরাসরি যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকে জনগণের যাতায়াতের ভরসা হয়ে পড়ে নৌকা আর এলাকাবাসীর চাঁদায় সেতুর পাশে সম্প্রতি নির্মিত বাঁশের সাঁকো।
এতে দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন এলাকার অন্তত অর্ধলক্ষাধিক জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় চার মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তারা এখনো কাজ শুরু করেনি। স্থানীয় এলাকার নানা পেশার ভুক্তভোগী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং দাউদকান্দি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, দাউদকান্দি উপজেলা সদর হতে কদমতলী পর্যন্ত সড়কের গোমতীর শাখা নদীর ওপর নির্মিত দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের কেডিসি-সংলগ্ন পাকা সেতুটি ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ইটবোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় বিকট আওয়াজে নদীতে ধসে পড়ে। এরপর থেকে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় লোকজন প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে নৌকাযোগে দিনের বেলায় নদীপথ ঘুরে অতি কষ্টে যাতায়াত করে আসছেন।
এতে তাদের সময় ও অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কপথে এ সেতু দিয়ে জেলার দাউদকান্দি পৌর এলাকা, দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়ন, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জনগণ নিয়মিত যাতায়াত করতেন। কিন্তু সেতুটি ভেঙে পড়ায় সড়কপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে গত দুই বছর ধরে এলাকার জনগণ দিনের বেলায় নৌকাযোগে চলাচল করেন। এতে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া রোগী ও বয়োবৃদ্ধদের সংকটাপন্ন মুহূর্তে চিকিৎসা দেওয়া যায় না।
তারা আরও বলেন, সেতুটি নির্মাণ না করায় নিরুপায় হয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য এলাকার পরিবারগুলোর নিকট থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী ২০০-৫০০ টাকা উত্তোলন করে ধসেপড়া সেতুর পাশে গত ১ অক্টোবর একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু নদীর প্রবল স্রোতে বাঁশের সাঁকোটিও তেমন টেকসই হয়নি। দিনের বেলা সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও রাতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ সাঁকো দিয়ে রোগী ও শিশুদের নিয়ে যাতায়াত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সেখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে গত ২৬ জুলাই মেসার্স এমইঅ্যান্ডডিসিএল (জেভি) নামের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এখনো কাজ শুরু করেনি। সহসা কাজ শুরু করা না হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।