কথিত কোটি টাকা মূল্যের তক্ষক নামমাত্র মূল্যে বিক্রির লোভ দেখিয়ে জিম্মির মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠেছে ৮টি অপহরকারী চক্র। শিল্পপতি-ব্যবসায়ীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই দলের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। বাণিজ্যিক মূল্য না থাকা সত্ত্বেও শুধু গুজব রটিয়ে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীটি ৭ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করছে তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে তক্ষক বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন খাগড়াছড়িভিত্তিক অপহরণকারী দলের এক সদস্য। এমনকি বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেওয়া হয়েছে এক ফুট লম্বা একটি তক্ষকের ভিডিও।
এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামের ভুজপুর-খাগড়াছড়ির রামগড়ের পাহাড়ি অঞ্চলে। এরপর জিম্মি করে আদায় করছে লাখ লাখ টাকার মুক্তিপণ। এ ধরনের অন্তত ৪০ জনের বিস্তারিত বিবরণ পেয়েছে পিবিআই।
চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, যা কিনতে আসছেন তারাও কোনো সহায়তা নিচ্ছেন না, কারণ এটা অবৈধ। দুপক্ষই এখানে উইন উইন সিচুয়েশনে ব্যবসাটা করে যাচ্ছে।
এদিকে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ঢাকায় তক্ষক বিক্রি করছে বান্দরবানভিত্তিক আরেকটি গ্রুপ। টাকা পাওয়ার পর ক্যারিয়ার দিয়ে তারা তক্ষক ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছে। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে দুটি তক্ষকসহ দুজনকে আটকের পর পাওয়া গেছে তক্ষক বেচাকেনার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সিএমপির সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী) ইয়াসির আরাফাত বলেন, এটা বান্দরবান থেকে ঢাকাতে যায়। এর মাঝামাঝি একটা পার্টি এটা পাচার করে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।
পটিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ৩ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকায় তারা এগুলো বিক্রি করে। তবে ৩০০ গ্রামের ওপরের গুলোর দাম বেশি।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি-ভুজপুর-হেঁয়াকো এবং খাগড়াছড়ির রামগড়ের দুর্গম নূরপুর পাহাড় এবং লালটিলা এলাকায় রয়েছে ৪টি অপহরণকারী দলের শক্ত অবস্থান। শাহজাহান, কালাম, সালাম, হাসান এবং দেলোয়ার রয়েছে গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে। পুলিশ কিংবা সাধারণ মানুষের আনাগোনা থাকায় এ পাহাড়েই সবচেয়ে বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমরা গ্রেফতার করব। এরা সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন। তারা যাতে প্রতারণা করতে না পারেন সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
১৮ নভেম্বর টানা ২৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ভুজপুরের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয় হেলাল নামে এক এনজিও কর্মকর্তার কঙ্কাল। কম দামে তক্ষক দেয়ার নাম করে আটকে রাখার পর এক বছর আগে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিল এই অপহরণকারী দলের সদস্যরা।