থ্যাংকস গিভিং ডে বা ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস। ক্রিসমাস বা বড়দিনের পর আমেরিকার সবচেয়ে বড় উৎসব ঐতিহ্যবাহী দিবস থ্যাংকস গিভিং ডে। প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার সর্বজনীন এ উৎসব হয়।
১৭৮৯ সালে কংগ্রেস এ দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করেন। প্রেসিডেন্ট সে অনুযায়ী একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। বর্তমানে প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ অর্থাৎ শেষ বৃহস্পতিবার এ থ্যাংকস গিভিং ডে শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর থ্যাংকস গিভিং ডে ২৬ নভেম্বর। এদিন আমেরিকায় সাধারণ ছুটি।
ভালো কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আদিবাসী আমেরিকানদের শুভকামনা এবং ধন্যবাদজ্ঞাপনের জন্য ফসল তোলার উৎসব হিসেবে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের মধ্যে স্পেনীয় এবং ফরাসিরা উত্তর আমেরিকায় থ্যাংকস গিভিং ডে সর্বপ্রথম শুরু করেন।
উল্লেখ্য, ১৬২০ সনের দিকে স্বাধীন ধর্মচর্চার উদ্দেশ্যে ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামক একটি জাহাজে চড়ে ইউরোপ ছেড়ে আমেরিকায় আশ্রয়ের জন্য আসা ব্যক্তিরা বর্তমান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ম্যাসাচুসেটস উপসাগরে যাত্রাবিরতি করেন।
তাদের অধিকাংশই খাবারের অভাবে অর্ধাহারে এবং শীতের প্রকোপে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুস্থ ব্যক্তিরা তীরে নেমে প্লিমিথ গ্রামের ও্যাম্প্যানগ আদিবাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। ও্যাম্প্যানগ্রা ইউরোপীয়দেরও বান মাছ ধরার এবং কর্ন (শস্য) চাষ করার প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেন। পরবর্তী বছর স্থানীয় ও বহিরাগত গ্রামবাসীরা আশাতীত ফসল ঘরে তোলেন এবং স্থানীয় শাসক উইলিয়াম আদিবাসীদের নিমন্ত্রণ দিয়ে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে এবং আদিবাসীদের সম্মানে ভোজের আয়োজন করেন। এ উৎসবে ৯০ জন আদিবাসী আমেরিকান এবং ৫৩ জন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক অংশ নিয়েছিলেন। ইউরোপীয়দেরও সহযোগিতার জন্য আদিবাসীদের ধন্যবাদ জানানো হয়।
পরবর্তীতে স্পেনীয় এবং ফরাসিরা শরৎ কিংবা শীত ঋতুর শুরুতে এটা প্রস্তুতিহীন ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের রীতি চালু করেন। আরও পরে এটা সাধারণ মানুষের উৎসবে পরিণত হয়। এটা এখন আমেরিকার অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। এ উৎসবে জাঁকালো ভোজের আয়োজন হয়। এ ভোজের অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো টার্কি মুরগি। ওভেনে পোড়ানো হয় পুরো টার্কি। সঙ্গে ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যানডি, পামকিন পাই থাকে।এ দিন কোটি কোটি টার্কি ভোজ হয়ে থাকে তবে রীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশন থেকে প্রাপ্ত একটি টার্কিকে জীবন ভিক্ষা দিয়ে সাধারণ ক্ষমা করেন প্রেসিডেন্ট।এটি ‘হোয়াইট হাউস টার্কি পার্ডন’নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সাল থেকে হোয়াইট হাউসে এ রীতি প্রচলিত রয়েছে। একই ভাবে এবারেও একটি টার্কির প্রাণভিক্ষা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে অনেকটা প্রথা আর সংস্কৃতির মিশ্রণে মোরগসদৃশ টার্কি ভোজের এ উৎসবের ব্যাপ্তি পুরো আমেরিকান সমাজেই। শপিং থেকে শুরু করে ভোজ বিলাস আর স্বজনের সান্নিধ্যে আসার উৎসবের আমেজ এখন সর্বত্র। মার্কিনিদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও থ্যাংকস গিভিং ডে পালন করছে বেশ উৎসব আর আনন্দ আয়োজনে।
থ্যাংকস গিভিং ডের পরের দিন শুক্রবার। ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামে পরিচিত এই শুক্রবার ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য কোনো কালো দিন নয়। বরং বছরের সেরা মূল্য হ্রাসের দিনটি ক্রেতাদের কাছে যেমন রঙিন তেমনি পণ্য বিক্রি করে লাভবান ব্যবসায়ীদের নিকটও আনন্দঘন। এবারের থ্যাংকস গিভিং ডেতে করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবীতে নিরাপদে সুস্থ ও জীবিত রাখায় মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হচ্ছে সব আয়োজনে।