বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলভদ্রপুর গ্রামের বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান শিক্ষককের এমন আচরণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। স্থানীয়দের মধ্যেও একধরণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান।
বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও ভূমি দাতা বিনয় কৃষ্ণ দাসও অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইনের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক অপু রানী দাসকে পরীক্ষার আগে থেকে প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। যে বিষয়টি জানতে পেরে আমি ফলাফল শিটে স্বাক্ষর করিনি। আমি স্বাক্ষর না করায় বিভিন্নভাবে আমাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমাকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ে নতুন কমিটি করা হয়। এখন পর্যন্ত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
বিনয় কৃষ্ণ আরও বলেন, দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইন একজন ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। তার পরিবারের সকলে পাশের রাষ্ট্র ভারতে বসবাস করেন। তিনি তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে বিভূতি ভূষণ গাইন নামে ভারতেও ভোটার হয়েছেন। ভারতের ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে। বাংলাদেশি অর্থ পাচার করে দেশিটিতে তিনি নামে বেনামে সম্পদ করেছেন। তার বাংলাদেশি ব্যাংক হিসেবে তেমন টাকা নেই। বিভিন্ন সময় তিনি বিদ্যালয়ের অর্থও তসরুপ করেছেন। যা বৈধ করতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ চুরি হয়েছে বলে প্রচার করেছেন। আসলে ওই নথিগুলো চুরি হয়নি, প্রধান শিক্ষক নিজের কাছে রেখেছেন বা নিজে থেকে ওই নথি ধ্বংস করেছেন। ইতোপূর্বে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এসব কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে এ দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি এসব অনিয়মের সঠিক বিচার দাবি করছি।
এদিকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এলএমএসএস-গার্ড) নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে মোরেলগঞ্জ উপজেলার কচুবুনিয়া গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে মো. নেয়ামুল ইসলামের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইন। চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে এবছর ২৩ জুলাই বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
প্রতারণার শিকার মো. নেয়ামুল ইসলাম বলেন, বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গার্ড পদে চাকরিতে আবেদন করেছিলাম। প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইন আমাকে বলেন, চাকরি পেতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। আমি তিন কাঠা জমি বিক্রি করে তাকে অগ্রিম দুই লাখ টাকা দেই। কিন্তু আমাকে চাকরি না দিয়ে আরও বেশি টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে দিয়েছে প্রধানশিক্ষক। পরবর্তীতে আমি টাকা ফেরত চাইলে স্থানীয় আনোয়ার হোসেন কাজী ও আজমল হোসেনের মাধ্যমে আমাকে ২৭ হাজার টাকা ফেরত দেন প্রধান শিক্ষক। আমি এখনও এক লাখ ৭৩ হাজার টাকা পাব তার কাছে। আমি যেকোন মূল্যে আমার টাকা ফেরত চাই।
শুধু নেয়ামুল ইসলাম ও বিনয় কৃষ্ণ দাস নন, স্থানীয়রাও অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক বিষ্ণুপদ দাস বলেন, গত তিনবছর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইন বিদ্যালয়ে যা ইচ্ছে তাই করছেন। তার কার্যক্রমের ফলে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ব্যহত হচ্ছে।
অবসর প্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মিলন দাস বলেন, এককথায় প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইনের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। তিনি অনেক অনিয়ম করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী ধর্মীয় শিক্ষক অপু রানী দাসকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। আসলে অপু ওই পদের জন্য কখনই যোগ্য নয়। আমরা তার এই হীন কাজের নিন্দা জানাই। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় অসীম চৌধুরী, সুবল দাস, শেখর দাস, অরুণ দাসসহ আরও অনেকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী ধর্মীয় শিক্ষক অপু রানী দাসকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বিধান চন্দ্র গাইনকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এই অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।