সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ২২ নভেম্বর (রোববার) সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর এ গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যদিও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকের বিষয়টি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু নতুন সূত্র বলেছে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এর আগে অসমর্থিত সূত্রের বরাতে ইসরাইলের গণমাধ্যম বৈঠকের বিষয়ে খবর প্রকাশ করে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট জানায়, তেল আবিব থেকে নেতানিয়াহুর প্রাইভেট জেট সৌদি আরবে অবতরণ করে। নেতানিয়াহুর তিনজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা বৈঠকের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। যা প্রমাণ করে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়েছে।
যদি সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েই থাকে তাহলে তা, নিঃসন্দেহে ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিজনেস ইনসাইডার দু’জন কর্মকর্তার বরাতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে ইরানে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা সেকেন্ড ইন কমান্ডকে হত্যা করে ইসরাইল। তার উপহার স্বরূপ সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের বৈঠকের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই দুই কর্মকর্তার একজন ইউরোপীয় এবং অন্যজন ইসরাইলের।
এ বৈঠক সৌদি আরবের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়ে ইসরাইলের পথকে আরও মসৃণ করবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০ জানুয়ারি শপথ নিচ্ছে মার্কিন নতুন প্রশাসন। তার আগে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বর্তমান প্রশাসন। সৌদি-ইসরাইল বৈঠককে সেই প্রচেষ্টার অন্যতম পদক্ষেপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তার একজন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং জোটসঙ্গী বেনি গ্র্যানটজের উপদেষ্টা। অন্যজন সৌদি আরবের রিয়াদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হয়ে কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধে আবু মোহাম্মদ আল মাসরিকে হত্যার পরিকল্পনা কয়েক বছর ধরে চলে আসছিল। ইউরোপীয় ইনটেলিজেন্সের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ওই হত্যাকাণ্ডে ইরানের তেহরানে মাসরির অবস্থান শনাক্তকরণসহ সবধরনের কারিগরি সহায়তা দেয়। তেহরানে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে ইসরাইলের খুনিবাহিনী।
আবু মোহাম্মদ আল মাসরি আল কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ওই গোষ্ঠীটির সেকেন্ড ইন কমান্ড। মাসরি প্রয়াত হামজা বিন লাদেনের শ্বশুর। হামজা মাসরির মেয়ে মারিয়ামকে বিয়ে করে। মারিয়াম এবং মারসি তেহরানে ১৩ নভেম্বর মোটরসাইকেলে আরোহনকারী দুই বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন।
হত্যার উপহার স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের বৈঠক আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয়। বৈঠক অনুসরণ করে সৌদি আরব ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান ও বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। ইসরাইলি সূত্র বৈঠককে স্বীকৃতির চূড়ান্ত ধাপ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিজনেস ইনসাইডারকে ইসরাইলি সূত্র জানায়, মারসিকে হত্যার বিষয় ইসরাইলের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদ প্রতিহতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছে ইসরাইল।
ইসরাইলি কর্মকর্তার দাবি করেন, ট্রাম্পের পুনর্নিবাচনের পরই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছিল সৌদি আরব। এছাড়া মার্কিন গোয়েন্দাদের সহায়তার পরও ইরানে ইসরাইলি হিটস্কোয়াড পাঠানো জটিল ছিল। তবে তেলআবিব চেয়েছিল তেহারন আল কায়েদার সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করছে-বিষয়টি প্রমাণ করতে। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে ইরানের সঙ্গে সংঘাত হতে পারে বলেও বলেন তিনি।