বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮০ শতাংশ ইঞ্জিনের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক আগে। যেগুলো রয়েছে তারও নেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ। রেল কর্তৃপক্ষের অজুহাত লোকবল সংকটের। জোড়াতালি দেয়া ইঞ্জিনে ঝুকিঁ নিয়ে চলছে ট্রেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,নতুন ইঞ্জিন কেনার কোন বিকল্প নেই তবে পুরানোগুলো রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট না বাড়ালে হুমকির মুখে পড়বে চলমান রেল ব্যবস্থা। রেলমন্ত্রী বলছেন সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেয়াদোত্তীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ লাইনেই চলছে ট্রেন
সরেজমিনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় বিকল হওয়া একটি লোকোমোটিভকে (ইঞ্জিন) টেনে নেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত কার্যক্ষমতার মেয়াদ ২৫ বছর আগেই শেষ হওয়া বিকল ইঞ্জিনটিকে যেটি দিয়ে টেনে আনা হচ্ছে তারও জীবনকাল শেষ হয়েছে ২০ বছর আগে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ ইঞ্জিনের অবস্থাই এমন।
স্বাধীনতার সময় রেল বহরে ইঞ্জিন ছিলো ৪৮৬টি। এরপর গেলো পঞ্চাশ বছরে যোগ হয়েছে শতাধিক। সব মিলিয়ে বর্তমানে ইঞ্জিন সংখ্যা ২৭৩টি। যার ৮০ ভাগেরই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক আগে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে বিকল ইঞ্জিনের সংখ্যা, তবে ৬২ শতাংশ লোকবল ঘাটতি নিয়ে মেরামত কুলিয়ে উঠতে পারছে না মেকানিকরা।
তার বলছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব লোকোমোটিভ দিয়ে কোনো রকমে জীবন চালানোর মত করে চলছে রেল সেবা। আর ইঞ্জিন মেরামতের কাজে থাকা অভিজ্ঞ মেকানিকদের অনেকেই অবসরে চলে যাওয়ায় লোকবল সংকট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক ভাবে হচ্ছে না এমনটা জানান তারা।
এদিকে ইঞ্জিন যত পুরানো হচ্ছে বাড়ছে সংরক্ষণ বাজেটের চাহিদা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘাটতি। গত ৫ বছরে ইঞ্জিন সংরক্ষণ চাহিদা বেড়েছে তিনগুন। ঘাটতিও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে।
রেল মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদার ৪৫ কোটি টাকার বিপরীতে বাজেট বরাদ্দ ছিলো ৩৪ কোটি টাকা, যেখানে ঘাটতি ছিলো ১১ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ করা হয় ২৯ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮’তে বরাদ্দ হয় ৩৪ কোটি টাকা যেখানে চাহিদা ছিলো ৫২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৮ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ করা হয় ৪২ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬৯ কোটি টাকা চাহিদা থাকলেও ২৩ কোটি টাকা ঘাটতি রেখে বরাদ্দ করা হয় ৪৬ কোটি টাকা।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিতরা বলছেন, মালামাল ও বাজেট সংকটের কারণে বিকল অনেক লোকোমোটিভকে (ইঞ্জিন) ফেলে রাখতে হচ্ছে। যতটুকু বরাদ্দ হয় তা দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে তাদের।
এই অবস্থায় রেলব্যবস্থা হুকমির মুখে- বলছেন, রেল কর্মকর্তা ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
বছরের শুরুতে বাজেট কম থাকায় তার প্রভাব অবশ্যই মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উপর পড়বে এমনটাই স্বাভাবিক সময় সংবাদকে এমনটাই বলছেন ঢাকা ডিজেল কারখানার কর্মব্যবস্থাপক জেবুন্নেসা জেরী।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক সময় সংবাদকে বলেন, ইঞ্জিনের যে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা, সেটা যদি না হয় তাহলে সেটার যে কমার্সিয়াল লাইফটা তা সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আর তখন ওই ইঞ্জিন অপারেশনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
সংকট সমাধানে ইঞ্জিন কেনাসহ রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
সময় সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি ১০টা নতুন মিটারগেজ ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে রেলে। আরও ২০টা মিটারগেজ পাইপলাইনে রয়েছে, যা শিগগিরই রেলে যুক্ত হবে বলে জানান মন্ত্রী। ভবিষ্যতে এমন আরও ৭০টি নতুন ইঞ্জিন কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেন রেলমন্ত্রী।
রেল মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, চারটি নতুন ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৪০টি নতুন রেল ইঞ্জিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বিভাগ, যার সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে নেই কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নতুন ইঞ্জিন কিনলেই হবে না, সেই সঙ্গে পুরাতনগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আর তা না হলে, হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে দেশের রেল ব্যবস্থা।