রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে রাজধানীর সাততলা বস্তির তিনশোর বেশি ঘর। পুড়ে যাওয়া ধ্বংস স্তূপের নিচে শেষ সম্বলের কিছু পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজে ফিরছেন ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু তালিকা তৈরি ছাড়া আর কোনো তৎপরতা সকাল থেকে চোখে পড়েনি।
তবে খাবার সরবরাহসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রাথমিকভাবে, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদাস চাহনি, চাপা হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী করে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন আকস্মিক আগুনে সব হারানো এসব মানুষ। একদিন আগেও জায়গাটি ঘিরে থাকতো তাদের জীবিকা আর বেঁচে থাকার সব আশা। সর্বনাশা আগুনে তাদের স্বপ্ন এখন ধোঁয়াময়। সব পুড়ে নিঃস্ব আগামী। অনাগত দিন আছে অনিশ্চয়তার চাদরে।
আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়া এক চায়ের দোকানির বললেন, বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল দোকানটি। জীবনের পুরোটা সঞ্চয় বিনিয়োগ করে দাঁড় করিয়েছিলেন ক্ষুদ্র এই ব্যবসাটি। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দোকানের ফ্রিজসহ সব জিনিসপত্র। আকস্মিক আগুনে কিছুই নিয়ে বের হতে পারেননি, বলছিলেন সময় সংবাদকে। তার মতো অনেকেই বলছেন, জীবন চালানোর মতো কোনো অবলম্বন আর অবশিষ্ট নেই তাদের।
নিকটজনের দেওয়া দুই হাজার টাকা বালিশের কাভারের মধ্যে রেখেছিলেন সাততলা বস্তির ষাটোর্ধ্ব এক নারী। জীবন বাঁচিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারলেও এক বেলা খাওয়ার সামর্থ্যই নেই বৃদ্ধার। চলার মতো ওই দুই হাজার টাকাও আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে তার।
ছাই থেকে যদি মিলে কিছু, কিংবা কোনো আসবাবপত্র অক্ষত আছে কিনা, সে আশায় পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের নিচেও অনেকে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর একটু অবলম্বন।
তেমনি নিজের পুড়ে যাওয়া ঘরের স্তূপ থেকে লোহালক্কর বা ধাতব কিছু খুঁজছিলেন কেউ কেউ। যা পাওয়া তা বিক্রি করে অন্তত কিছু টাকা আসবে বলছিলেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই নিজের পরনের কাপড়টুকু ছাড়া কিছুই বাঁচাতে পারেননি।
সোমবার রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সাততলা বস্তির তিনশোর বেশি ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে হতে পারে আগুনের সূত্রপাত। বস্তিবাসী অনেকের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া যায়, বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ না নেয়ার তথ্য।
বস্তির বাসিন্দারা সময় সংবাদকে জানান, বিদ্যুতের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণকারীদের দিতে হয় প্রতিমাসে ১২০০ টাকা করে। বিদ্যুতের ব্যবহার যাই হোক না কেনো ওই বস্তিতে থাকতে গেলে নির্ধারিত টাকাই পরিশোধ করতে হত তাদের।
সব হারানো এসব মানুষের দিকে খাবারসহ নানাভাবে সহায়তায় দেখা যায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগও। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকেও দেখা যায়।
তবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে থেকেও বস্তিবাসীর প্রত্যাশা, সবার সহায়তায় আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।