‘সম্পদ লুটপাটকারীদের পক্ষে আন্দোলনে ভুক্তভোগী এতিমরা’
এতিমদের সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই আত্মসাৎকারীদের মুক্তির দাবিতেই আবার আন্দোলন করছে এতিমরাই। অভিযোগ উঠেছে, সংঘবদ্ধ চক্রের খপ্পরে পড়ে অর্থলোপাটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা।
এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ আটক হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির দুজন শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর। অভিযোগ উঠেছে, যাদের সম্পদ লুটে নেওয়া হচ্ছে সেই এতিমদেরই আন্দোলনের মাঠে নামানো হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে ওই চক্রটি।
তবে তবে অর্থ ও সম্পদ আত্মসাতের এমন অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করছেন অভিযুক্তরা।
দুই শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকের প্রতিবাদে রোববার (২২ নভেম্বর) এই বিক্ষোভ করে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার শিশু-কিশোররা।
যাদের মুক্তির দাবিতে এতিমরা রাজপথে নামে, শরীরচর্চার সেই শিক্ষক হারুণ অর রশিদ ও আবাসিক শিক্ষক ইউসুফ আলী মোল্লার বিরুদ্ধে রয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থলোপাট ও অনিয়মের অভিযোগ।
এতিমখানার মালিকানাধীন এই মার্কেটের ১২টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রত্যেক দোকান থেকে আড়াই থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত ওই দুজন শিক্ষকসহ চক্রটির বিরুদ্ধে।
আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন এতিমখানা মার্কেটের এক দোকানের ভাড়াটিয়া মুজিবুর রহমান। দোকানের নাম ট্রান্সফার বাবদ তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন এতিমখানার সাবেক এক হিসাবরক্ষক ও শরীরচর্চার শিক্ষক হারুন অর রশিদ। তবে টাকা নিলেও কিছু দিন পর ভাড়াটিয়া মুজিবুর রহমানের নামে পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে উল্টো দোকানের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে বলেন ওই দুজন।
এতিমখানার গভর্নিং বডির আহ্বায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সময় সংবাদকে জানান, এতিমখানারই কোনও কোনও নিবাসী (এতিম শিক্ষার্থী) ও সাবেক কিছু পদধারী প্রভাবশালী মিলে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছে। তার অভিযোগ এতিমখানাটি গ্রাস করতেই প্রচুর অর্থ লোপাট হয়েছে চক্রটির মাধ্যমে।
এতিমখানায় দানের টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা প্রতি মাসেই। কিন্তু ২০০৯ সালের এই জমা বই এখনো শেষ হয়নি। জমা বইয়ের শেষের দিকের তিনটি পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ২০১১ সালের পর ২০১৫, ২০১৭ ও ২০২০ সালে কয়েক বছর পর পর সামান্য অঙ্কের অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে।
এতিমখানার বর্তমান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুসরাত আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর পাননি গুরুত্বপূর্ণ অনেক হিসাবে তথ্য। এতিমখানার আজীবন সদস্যরা যে অনুদান দেন সেটার হিসাব রাখতে আলাদা আলাদা জমা বই আছে হিসাবরক্ষণ বিভাগের কাছে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর আজীবন সদস্যদের হিসাবের বেশকিছুই বই বুঝে পাননি সময় সংবাদদের কাছে এমন অভিযোগ করেন নুসরাত আলম।
সম্প্রতি অনিয়মের বিষয়গুলো নজরে এলে নড়েচড়ে বসে বর্তমান গভর্নিং বডি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন অর্থআত্মসাতে জড়িত এমন অভিযুক্তদের অন্যতম একজন এতিমখানার অফিস সহকারী এমদাদুর রহমান। তিনি বলেন, এমন অভিযোগ অসত্য। এগুলো একটা স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র বলে আমি করি।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক (সুপারিনটেন্ডেন্ট) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা যখন দেখলাম অনুদানসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আসা লাখ লাখ টাকা এতিমখানার তহবিলে জমা পড়ছে না, তখন আমরা একেক (অভিযুক্তদের) করে ধরতে শুরু করলাম। তাদের কাছে যখন হিসাব চাইলাম তখনই তারা বেঁকে বসল।
গভর্নিং বডির সদস্যরা বলছেন, এতিমখানার জমিতে নির্মিত বহুতল ভবন কনকর্ড কনডোমিনিয়ানের মালিকানা নিয়ে জটিলতা ছিল। কিন্তু আদালতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ভবনটি মালিকা দেওয়া হয় এতিমখানাকে। আদালতের নির্দেশমত ভবনটির মালিকানা বুঝে পেলে এতিমখানার আয় বেড়ে যাবে বহুগুণ। আর এটা ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে আত্মসাৎকারী চক্রটি এমন অভিযোগ বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্যদের।