শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র যেন টর্চার সেল। সংশোধনের নামে নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে বার বার। যশোরে নিহত তিন শিশুর একজন প্রাণ বাঁচাতে বয়স বাড়িয়ে কারাগারে যেতে চেয়েছিল। সমাজকর্মীরা বলছেন, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার এমন অনেক গল্প থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। শিশুদের দেখভালে আরো মানবিক হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নজরদারির দাবি তাদের।
ভুল শুধরে বুকে ফিরবে সন্তান। এমন স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। সন্তানহারা মায়ের গগনবিদারি আকুতি। নিহত রাব্বির মা পারভীন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমি আমার সন্তানটাকে ভালো করে দেয়ার জন্য দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমায় শূন্য করে দিল।'
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্মম নির্যাতনে আরো দুই কিশোরের সঙ্গে প্রাণ হারায় খুলনার পারভেজ হাসান রাব্বি। খুনের মামলায় আটক রাব্বি বাবা-মাকে আগেই জানিয়েছিলো কেন্দ্রের অনিয়মের বিষয়ে। এমনকি প্রাণে বাঁচতে ১৭ বছরের রাব্বি বয়স বাড়িয়ে জেলে যেতে চেয়েছিল।
নিহত রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বলেন, 'আমার ছেলে বলেছিলো আমার বয়স বাড়িয়ে এখান থেকে নিয়ে জেলে দাও। এখানে থাকলে আমি বাঁচতে পারবো না। জেলে সারাজীবন জেল খাটবো কোনোদিন বাইর করতে তোমাগো কবো না।'
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। নিজেদের মধ্যে বিবাদ-মারপিট, কর্তব্যরতদের মারধর, নেশা জাতীয় দ্রব্যের অবাধ প্রাপ্তি, অধিকার ক্ষুন্ন হওয়াসহ নানা কারণে বার বার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে কেন্দ্রগুলো। বছর চারেক আগে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে মুক্তি পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোরের বক্তব্যে স্পষ্ট সেখানকার অনাচার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কিশোর বলেন, 'বড়ভাইয়েরা মিলে ভয় দেখায়। যদি কোনো ভুল পায় অনেক মারে। স্যারেরাও জড়িত আছে না হলে এত ক্ষমতা ওরা পায় না।'
২০১৪ সালে টঙ্গী এবং গাজীপুরে দেহ রক্তে রাঙিয়ে প্রতিবাদও জানায় শিশু-কিশোরেরা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সংখ্যা তিনটি। মেয়ে শিশুদের জন্য পরিচালিত কেন্দ্রে কিশোরীদের সংখ্যা ঠিক থাকলেও ছেলে শিশুদের দুটি কেন্দ্রেই ধারণ ক্ষমতার চাইতে বাসিন্দার সংখ্যা দ্বিগুণ। এছাড়া জনবলেরও কমতি রয়েছে প্রতিটিতেই।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সাবেক মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির বলেন, 'শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যে ৩ শিশু মারা গেছে সেটি অবশ্যয় দুঃখজনক। সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, আমাদেরও জনবলের সংকট আছে।'
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সিনিয়র কো অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা জানান এসব শিশুশেদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে ও সমাজের মূল ধারায় ফেরাতে বিকল্প নেই পরিচর্যার। প্রয়োজন শিশুবান্ধব, মানবিক ও প্রশিক্ষিত কর্মীর।
পরিবারকে এ বিষয়ে সচেতন পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।