সন্তানের অপারেশনের জন্য ভিক্ষা করে যোগাড় করা পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খুলনা মেডিকেলের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বদলীর পরও রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান পরিচয় ব্যবহার করে নিজের কর্মস্থল খুলনা থেকে রংপুরে এসে অপারেশন করছেন অভিযুক্ত ডা. মারুফুল ইসলাম। এদিকে টাকার অভাবে থেমে আছে মোরসালিনের অপারেশন।
মোরসালিনের পরিবারের সদস্যরা জানায়, গেলো বছরের ২৬ ডিসেম্বর অসাবধানতাবশত রংপুর নগরীর চিলমোনে নিজ বাড়িতে দগ্ধ হয় সাত বছরের মোরসালিন। এরপর তাকে রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নেয়া হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তার শরীরের পোড়া ক্ষত সারলেও থুতনির চামড়ার সাথে বুকের চামড়া লেগে থাকায় মোরসালিনের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছিলো। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য অপারেশনের প্রয়োজনে তার বাবা-মা সম্প্রতি রংপুরে ডা. মারুফুল ইসলামের দ্বারস্থ হন।
মোরসালিনের মা ও বোনের অভিযোগ, অপারেশনের জন্য প্রথমে এক লক্ষ টাকা দাবী করলেও আশি হাজার টাকায় রাজী হন ডা. মারুফুল। শেষ পর্যন্ত শিশুটির দিনমজুর বাবা মানুষের কাছে ভিক্ষা করে পঞ্চাশ হাজার টাকা ডা. মারুফুলের হাতে তুলে দেন।
মোরসালিনের অপারেশনের জন্য কয়েকদিন আগে রংপুর নগরীর ধাপে ফাস্ট কিওর স্পেশালাইজড হসপিটালে নেয়ার পর মোরসালিনের কোভিড পরীক্ষার পর অপারেশনের সিদ্ধান্ত জানান ডা. মারুফুল। রংপুর মেডিকেলে কোভিড পরীক্ষা করাতে গেলে মোরসালিনের বাবা-মাকে অনেকেই অপারেশনের জন্য ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করতে বলেন। পরে তারা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে যোগাযোগ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, মোরসালিনের অপারেশনের জন্য ওষুধ ছাড়া আর কোন টাকা খরচ হবে না। পরে তারা মোরসালিনকে মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
পরে মোরসালিনের পরিবারের সদস্যরা ডা. মারুফুলের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি জানান, বাকি ত্রিশ হাজার টাকা আনলে তিনি মোরসালিনের অপারেশন করাবেন। কিন্তু টাকা ফেরত দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে মোরসালিনের প্রতিবেশী ফটো সাংবাদিক আদর রহমান ডা. মারুফুলকে ফোন করলে তিনি আদর রহমানকে আপত্তিকর কথা বলে ফোন রেখে দেন। এদিকে টাকার অভাবে মোরসালিনের অপারেশন করাতে পারছেন না তার দরিদ্র বাবা-মা।
ডা. মারুফুল ইসলাম মোবাইলে সময় সংবাদের কাছে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও নানা রকম অসামঞ্জস্য কথাবার্তা বলেন। তিনি বলেন, যারা টাকা দিয়েছে তাদের পাঠান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে খুলনায় বদলীর পরও তিনি ব্যবস্থাপত্রে কেন রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রধান হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং খুলনা থেকে রংপুর এসে কেন চিকিৎসা দিচ্ছেন তার কোন উত্তর না দিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
গতকাল শনিবারও ডা. মোরসালিন রংপুরের ধাপে ফাস্ট কিওর স্পেশালাইজড হাসপাতালে অপারেশন করেছেন বলে জানান হাসপাতালের ম্যানেজার ডাবলু। ডা. মারুফুল আর রংপুর মেডিকেলে কর্মরত নন। এর বাইরে কিছুই বলতে রাজী হননি মেডিকেলের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম।