বৈরুত বিস্ফোরণে পর নানা সংকটের মধ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে লেবানন। দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সমস্যা নিরসনে আগ্রহী তার দেশ। এদিকে, বিস্ফোরণের মূল কারণ অনুসন্ধানে শিগগিরই মাঠে নামবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ইতোমধ্যে বৈরুতে কাজ শুরু করেছে ফরাসি তদন্তকারী দল।
সিরিয়ান শরণার্থী আয়শা। কয়েক বছর আগে আশ্রয় নেন লেবাননে। বৈরুত বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন তিনি ও তার দুই শিশুসহ পরিবারের অন্যরা। তার ভাষায়, এই বিস্ফোরণ কোনো অংশেই সিরিয়ার যুদ্ধের থেকে কম ভয়াবহ ছিল না।
সিরিয়ান শরণার্থী আয়শা বলেন, আমার বাড়ি-ঘর সব ধসে গেছে। এমন বিস্ফোরণ কখনো দেখিনি আমার জীবনে। মনে হচ্ছিল বিকট শব্দেই মরে যাবো।
এ ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার। চোখের জল আর শ্রদ্ধায় বিদায় জানানো হয় হতভাগ্যদের।
এক লেবানন নাগরিক বলেন, বৈরুত এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। এই শহর আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা জানি না।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সংকট কাটাতে প্রতিবেশী ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। মিশেল আউন এক সাক্ষাৎকারে জানান, ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সমস্যা নিরসন করে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান তিনি। বিস্ফোরণের পরপর অনেক বিশ্লেষক, ইসরাইলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন, কিন্তু বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তেল আবিব। উল্টো তারা সাহায্য করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
লেবানন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেন, আমাদের অনেক ত্রাণ সহায়তা দরকার। যারা এরই মধ্যে সহায়তা করেছেন, তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ করাই এখন মূল লক্ষ্য।
এদিকে জাতিসংঘও লেবাননের সাধারণ মানুষের জন্য আরও জরুরি সহায়তা চেয়েছে। সাড়ে ৫৬ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে এর চেয়েও বেশি অর্থের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। এছাড়া দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায়, অভিবাসন টাস্ক ফোর্স গঠন করছে কানাডা। এর মাধ্যমে লেবাননের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেবে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র আবারও বৈরুত বিস্ফোরণের স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেছে। এ লক্ষ্যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের- একটি দল দ্রুতই তদন্ত শুরু করবে।
ফরাসি তদন্তকারী দলও বৈরুত বন্দরে কাজ শুরু করেছে। প্রথমে দেশটি আন্তর্জাতিক তদন্তে অনিহা দেখালেও, ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি এই বিক্ষোভেই হাসান দিয়াদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়।
গেলো চৌঠা আগস্ট, বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ১৭৮ জন, আহত হয়েছেন ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। এতে অন্তত তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।