থানায় সাধারণ ডায়েরি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে সরাসরি জানিয়েও ৯ মাসে খোঁজ মেলেনি সাতক্ষীরার বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের। এদিকে বেতন ও রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। খাগড়াছড়ি সদর থানা থেকে বাংলাদেশের সকল থানায় তার নিখোঁজের বার্তা পাঠানো হলেও এখনও তার সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবরদাড়ী গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে মো. শহিদুজ্জামান ২০০৭ সালে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে বাগেরহাট জেলায় চাকরি শুরু করেন। সেখানে ১০ বছর চাকরি শেষে তাকে বদলি করা হয় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। জেলার সদর পুলিশ ফাঁড়িতে তিনি কর্মরত ছিলেন দুই বছর। গত ২০ নভেম্বর ১৫ দিনের অর্জিত ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তৌহিদুজ্জামান। ওই দিন রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন।
স্ত্রীর ভাষ্যমতে, মাওয়া ফেরিঘাট আসার পর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। পরদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার কোনো সন্ধান না মেলায় ২২ নভেম্বর বাগেরহাট থানায় ও খাগড়াছড়ি সদর থানায় পৃথক দুইটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী। খাগড়াছড়ির জেলা সদর থানা থেকে বাংলাদেশের সব থানায় বার্তা পাঠানোর পরও সন্ধান মেলেনি তার।
স্ত্রী মোসলিমা খাতুন জানান, আমার স্বামী খাগড়াছড়ি থেকে ২০ নভেম্বর বাড়ি ফেরার পথে মাওয়া ঘাটে আসার পর আর যোগাযোগ হয়নি। এ বিষয়ে বাগেরহাট থানায় জিডি করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গিয়েও তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনের কার্যালয়ে হাজির হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আকুল আবেদন তার ছেলে মেয়েরা যেন তার আব্বুকে ফিরে পায়।
মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আব্বুকে ফিরে পাবার আকুতি জানিয়েছেন।
শ্যালক শাহিন উদ্দিন জানান, তার সন্তানরা যেন তার আব্বুকে ফিরে পায়। তারা খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। তাদের বেতন বন্ধ, রেশন বন্ধ তারা চলতে পারছে না। বোনাইকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনিও আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
শ্বশুর জামাল উদ্দিন জানান, সমস্ত কর্মকর্তার কাছে যাওয়া হয়েছে কোনো ফল হয়নি। তিনি জামাইকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, তাকে খোঁজার জন্য পুলিশ সর্বত্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি পুলিশ পরিবারের সদস্য, তার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নাই।
গত বছর ২০ নভেম্বর থেকে এই ৯ মাস কনস্টেবল মো. তৌহিদুজ্জামানের সন্ধান না পেয়ে বেতন রেশন বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সন্তান দুটিকে নিয়ে স্ত্রী মোসলিমা খাতুন।