ঘরোয়া লিগ শেষ। এবার ইউরোপ সেরার লড়াই শুরু হচ্ছে আবারো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হচ্ছে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। আগের পর্বে ২-১ গোলে জিতে কাজ অনেকটুকু সেরে রেখেছে পেপ গার্দিওলার ম্যানসিটি। এবার জিনেদিন জিদানকে দিতে হবে তার টোটকার পরীক্ষা। ইউরোপের শীর্ষ দুই ক্লাবের লড়াইয়ের আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক দুই দলের স্ট্র্যাটেজির দিকে।
নি:সন্দেহে বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম দুই ক্ষুরধার মস্তিষ্কের কোচ জিনেদিন জিদান ও পেপ গার্দিওলা। ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে এসে দুইজন নিয়েছেন ভিন্ন দুই পদ্ধতি।
বদলে যাওয়া পৃথিবীতে এ এক ভিন্ন আমেজের লড়াই। লড়াইটা অর্থের ঝনঝনানি বনাম ঐতিহ্যের। অভিজ্ঞের বিপরীতে তারুণ্যের। রিয়ালের কাছে এ ম্যাচ মানে যেখানে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা, বিপরীতে সিটিজেনদের ট্র্যাকে থাকা। তাইতো দুই দেশের দুই জায়ান্ট ক্লাব আর বর্তমান সময়ের সেরা দুই কোচের এই মর্যাদার লড়াই, পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
তবে সে যুদ্ধে খানিক এগিয়ে ম্যানসিটি। কারণ কোচ জিদানের পছন্দের তালিকায় না থাকায় ইংল্যান্ডের বিমানে জায়গা হয়নি গ্যারেথ বেল-হামেস রদ্রিগেজের। কার্ড সমস্যায় নেই মাদ্রিদের গ্ল্যাডিয়েটর সার্জিও রামোস। তাইতো স্পটলাইট থাকবে ক্যাসেমিরো, মদ্রিচ, ক্রুস, আর জিজুর প্রিয় শিষ্য বেনজেমার ওপরই।
তবে এই ম্যাচে মূল ব্যবধানটা গড়ে দিবে মূলত মিডফিল্ডই। দুই দলেরই মিডফিল্ড বেশ শক্তিশালী সেটি বলতেই হবে। আগের পর্বের ম্যাচে ৫ জন মিডফিল্ডারকে নামিয়ে দিয়েছিলেন গার্দিওলা। লক্ষ্যটা এমন, মাঝমাঠটা ঠিক রেখে তারপর আক্রমনে যাও। বলটা যেন মাঝমাঠের নিচে না যায়। জিদানও নামিয়েছিলেন ৪ জনকে। তবে সবকথার শেষ কথা, অর্থ তো কথা বলেই। সেটাই স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল আগের ম্যাচেও, ব্যবধান গড়ে দিতে পারে এই ম্যাচেও।
দুই দলের মিডফিল্ডের আর্থিক ব্যবধানটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। ধনকুবের ক্লাব ম্যানসিটি তাদের দলবদলের সিংহভাগ অর্থ ঢেলেছে মিডফিল্ডে। বলা যায়, গার্দিওলা উদার হস্তে খরচ করেছেন এই পজিশনে।
২০১৫ সালে কেভিন ডি ব্রুইনাকে কেনার পর থেকে দুই দলের মিডফিল্ডের পার্থক্যটা আকাশ সমান। গেল ৫ মৌসুমে সিটিজেনরা কেবল মিডফিল্ডার কিনতেই খরচ করেছে ২১৬ মিলিয়ন ইউরো! এরমধ্যে ডি ব্রুইনাকে কিনতে সিটিজেনদেরকে খরচ করতে হয়েছে ৭৬ মিলিয়ন ইউরো। রদ্রিগো হার্নান্দেজের পেছনে ব্যয় করেছে ৭০ মিলিয়ন ইউরো। রিয়াদ মাহরেজের পেছনে খরচ ৬৭.৮ মিলিয়ন। বার্নার্দো সিলভাকে কিনতে হয়েছে ৫০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে।
অন্যদিকে, গেল ৫ বছরে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের মিডফিল্ডে ব্যয় করেনি বললেই চলে। কেবল ক্যাসেমিরোকে তারা পোর্তো থেকে উড়িয়ে এনেছে ৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে। এছাড়া হামেস রদ্রিগেজ ও ফেদে ভালভার্দেকে তারা ধারে খেলতে দিয়েছিল। আবার ফিরিয়েও এনেছে বিনে পয়সায়। যদিও রদ্রিগেজ জিদানের ভাবনায়ও নেই এখন আর। টনি ক্রুস কিংবা মদ্রিচরা তো আছেন আগে থেকেই।
তার মানে কেবল মিডফিল্ডেই রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির পার্থক্য ২০৯ মিলিয়ন ইউরোর! টাকার ঝনঝনানির এই খেলায় টাকা তো কথা বলবেই। আর গার্দিওলার পক্ষে সেই কথা বললে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই পর্বেই থামতে হবে রিয়াল মাদ্রিদকে।