অপরিচিত করোনাকাল। অনিশ্চিত আগামী। যাপন ও জীবনের বিপন্ন এই সময়টাতে পরিচিত মানুষগুলো, ক্রমেই যেন বদলে যাচ্ছে। হয়ে পড়ছে অচেনা। বিপদে মিলছে না বন্ধুত্বের হাত। মিলছে না সামান্যতম সহানুভূতি। বরং দিনে দিনে ভারী হচ্ছে নিষ্ঠুরতার আখ্যান। তবুও কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন ঘুরে দাঁড়ানোর। স্বপ্ন দেখেন স্নিগ্ধ-সুন্দর আগামীর।
কোমল হৃদয়ে কঠিনতর আঘাত। করোনাকালের চরম নিষ্ঠুরতার শিকার ছোট্ট শিশু আদিবা। দুই মাসের ভাড়া বকেয়া থাকায় মায়ের সঙ্গে এক কাপড়েই ছাড়তে হয় দীর্ঘদিনের আবাস-ভাড়া বাসা।
শিশু নাবিলা বলেন, ‘বাড়িওয়ালা বলেছে চলে যাও, খুব কষ্ট লাগছে-আম্মু আমি নানু চলে আসি।’
ভুক্তভোগী পারভীন বলেন, ‘উনারা তো এক মাসই সহ্য করেন না। তার মধ্যে বাসা ভাড়া বকেয়া রয়েছে দুই মাস।’
জীবন নামের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই পারভীনকে দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। স্বামীর অকাল মৃত্যু, দারিদ্রতা, চাকরি হারানো, এতোসব কষ্টও আজ ছাপিয়ে গেছে করোনাকালের অমানবিকতার কাছে।
পারভীন বলেন, ‘গায়ে জামা-কাপড় (এক কাপড়ে) যা ছিলো তাই নিয়ে বাসা ছেড়ে আসতে হয়েছে।’
জীবনের গল্পটা সবসময় চলে না সরল সমীকরণে। থাকবে উত্থান-পতন। থাকবে টানাপোড়েন। নিয়তির এই বিধান মেনেই স্বামীর মৃত্যুর পর আজ থেকে পাঁচ বছর আগে গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছিলেন পারভীন। পেশাগত জীবনে অনেকের যেমন সমর্থন পেয়েছেন তেমনি, হজমও করতে হয় নানা কটুক্তি।
এতোকিছুর পরেও দমে যাননি সংগ্রামী এই নারী। অন্যের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক হিসেবে অনেকটা স্বাচ্ছন্দেই চলছিলো সংসার। তবে আরো অনেকের মতোই করোনার কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা পাননি তিনি। রক্ষা পায়নি পারভিনের যাপিত জীবনের একমাত্র অবলম্বন, চাকরি।
স্বপ্নে বাঁচে মানুষ। স্বপ্ন যোগায় টিকে থাকার শক্তি। লড়াকু পারভীনও স্বপ্ন দেখেন সুন্দর একটি সকালের। আবারো পছন্দের পেশায় ফিরে পাওয়ার। নিজ উপার্জনে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার।