বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া বিশ্বব্যবস্থায় গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বেসলে।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ তহবিল গঠন না করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে এ আশঙ্কা করে তিনি দরিদ্রদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা না গেলে অন্তত তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারেন।
বেসলে জানান, বিভিন্ন দেশের সরকারের আর্থিক সহায়তায় বিশ্বে অন্তত একশ মিলিয়ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয় ডব্লিউএফপি। তার মধ্যে অন্তত ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষ খাবার না পেলে অনাহারে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। জীবন বাঁচাতে হলে তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি থমকে গেছে। ডেভিড বেসলে মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ ডব্লিউএফপি'কে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে। আর এতে বিপর্যয় আরও বেড়ে যাবে।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি ‘আমরা অর্থায়ন বন্ধের কবলে পড়ি তাহলে সর্বনিম্ন ৩০ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে দিনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। সে কারণেই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনার সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনা করার কথাও বলেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য জানানা গেছে। এরইমধ্যে ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাবিশ্বে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৯৬০ জনের। আর শনাক্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৫১৫ জন। এখন করোনা শনাক্ত ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৪৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ২০৬ জন। মোট শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯ জনের। মারা গেছে ২৮ হাজার ৫২৯ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনা শনাক্ত হওয়া শীর্ষ পাঁচটি দেশ ইউরোপের। এর মধ্যে স্পেনে শনাক্ত ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৯ জন ও মৃত্যু ১৮ হাজার ৮১২ জন, ইতালিতে শনাক্ত ১ লাখ ৬২৫ হাজার ১৫৫, ফ্রান্সে শনাক্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩, জার্মানিতে শনাক্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৩ ও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ৯৮ হাজার ৪৭৬ জন।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বলছে, ৫ দিন ধরে টানা করোনা শনাক্ত বাড়ছে বাংলাদেশে। এ সময়ে পরীক্ষার সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
বাংলাদেশে আজও নতুন করে ৩৪১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৭২ জনে। করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুপুরে এ তথ্য জানানো সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে। শেষ ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে যে দশ জন মারা গেছেন তাদের ১ জন ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী। ৫ জন ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী। ৩ জন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী। ১ জন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী।
গত চব্বিশ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২০১৯টি। যা থেকে ৩৪১ জন রোগীকে করোনায় আকান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৭২ জন। ১৫ই এপ্রিলের তুলনায় যা ১৬ শতাংশ বেশি বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মাসের শেষ দিক থেকে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এই সিদ্ধান্তের পরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এরইমধ্যে নানা পদক্ষেপও নিয়েছে।