লিবিয়া সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলার সময়ই ঘানি তেলক্ষেত্র থেকে ২ বাংলাদেশীকে তুলে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা। এসময় তাদের সাথে আরো ৭ বিদেশীকে ধরে নিয়ে গেলেও মুসলমান পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এ দুই বাংলাদেশীসহ ঘানার আরেক নাগরিককে ছেড়ে দেয় তারা। সময় সংবাদকে বন্দি জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন লিবিয়া থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা জামালপুরের হেলালউদ্দিন ও নোয়াখালীর আনোয়ার।
'অয়েল ফিল্ডে অ্যাটাক করার পর আমরা আওয়াজ পেয়ে বাইরে আসি। এর পাঁচ মিনিটের ভেতরেই আমাদের ক্যাম্পে এসে কোম্পানির বাসের চাবি নিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে বাসে উঠায়। তারপর কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে কথাবার্তা বলে তিউনিশিয়ান ও লিবিয়ান দুজনকে ছেড়ে দেয়। আর আমাদের বাকি নয় জনকে নিয়ে রওনা হয়। '
এভাবেই আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি হওয়া থেকে শুরু করে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত পুরো ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিচ্ছিলেন নোয়াখালীর আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, মুসলিম পরিচয় পেয়ে ঘানার একজন এবং বাংলাদেশী দুইজনকে একসাথে রাখে জঙ্গিরা। মুক্তি পাওয়া আরেক বাংলাদেশী জামালপুরের হেলালউদ্দিনও জানান, মুসলিম পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তাদের কোন ক্ষতি করেনি জঙ্গিরা।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, 'আমাদের পরীক্ষা করে সুরা-কেরাত জিজ্ঞাস করেন। যাচাই-বাছাই করে পরে আমাদের একটি রুমে লক করে রাখে। '
১৭ দিনের বন্দি অবস্থায় সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে কমপক্ষে ৫ টি ক্যাম্প বদল করে তাদের আটকে রাখা হয় বলে জানান আনোয়ার। এসময় বেশ কয়েক রাত মরুভূমিতেই কাটাতে হয় তাদের।
আনোয়ার বলেন, 'আমরা বালুর উপর ঘুমাতাম। ওরা গাড়িতে ঘুমাতো। এর আশেপাশে ওদের অর্মিরা থাকতো। সকালে ফজরের নামাজের সময় ডাক দিতো। '
অবশেষে তাদেরকে মুক্ত করে সিরত শহরের এক মাদ্রাসায় রেখে আসে জঙ্গিরা। সেখান থেকেই এই দুই বাংলাদেশী স্থানীয় দূতাবাস ও দেশের স্বজনদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। পরে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আর্মি হাসপাতালে নিয়ে আসে লিবিয়ার সরকারী বাহিনী।
আনোয়ার বলেন, 'মাগরিবের পর ওরা আমাদের একটি মাদ্রাসায় গিয়ে রেখে আসে। ওখানে মাদ্রাসার ছাত্রের কাছে মোবাইল ছিলো, তাদের মোবাইল দিয়ে আমাদের কোম্পানিতে জানিয়েছি, দেশেও জানিয়েছি। এরপর অর্মিদের গাড়ি আমাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে। '
গত ৬ মার্চ লিবিয়ার জাল্লা শহরের নিকটবর্তী আলঘানি তেলক্ষেত্র আক্রমণ করে এই দুই বাংলাদেশীসহ আরো ৭ জনকে ধরে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা। এদের মধ্যে ছিলেন অস্ট্রিয়ার ২ জন, ফিলিপাইনের ৪ জন এবং ঘানার ১ জন।
আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত এই দুই বাংলাদেশী সোমবার বিকেল ৫টায় তিনি লিবিয়া থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।