ঠাণ্ডা মাথায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। পিবিআই-এর কর্মকর্তাও জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ জেলে বসে এ পরিকল্পনা করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি, তৎকালীন সোনাগাজীর ওসি প্রথমেই হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান। আইন বিশেষজ্ঞের মতে, অপপ্রচার চালানোর জন্য ওসির নাম উঠে আসায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪ ধারা অনুযায়ী তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আর নুসরাতের পরিবার চায়, অপপ্রচারের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর, এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেমের অনুরোধে স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম কর্মীসহ অনেকেই এটিকে নুসরাতের আত্মহত্যার চেষ্টা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। গত ৮ এপ্রিল ওসি নিজেই তার মোবাইলে ২৭ মার্চ রেকর্ড করা নুসরাতের ভিডিওটি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করেন।
সবশেষে ৯ এপ্রিল ওসিকে দিনের বেলা প্রত্যাহারের পর সন্ধ্যায় তিনি সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে থানায় নিজ কক্ষে ডেকে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টাও চালান।
সোনাগাজী ফেনী আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, 'উনি যখন এটিকে আত্মহত্যা বলছিল তখন আমরা বলছিলাম না এটি একটু ভালো করে তদন্ত করে দেখা হোক। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।'
গত ২৮ এপ্রিল নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজের আদালতে স্বীকারোক্তিতে বের হয়ে আসে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার পূর্ব পরিকল্পনার কথা। আইন বিশেষজ্ঞের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপচেষ্টাকারী হিসেবে ওসি'র নাম আসায় নুসরাত হত্যা মামলায় আসামি করা যেতে পারে তাকে।
চট্টগ্রাম পিবিআই বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল বলেন, 'শামীম এবং নুরুউদ্দিনকে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে বলে। এবং চাপ প্রয়োগে কাজ না হলে হত্যা করতে বলে। এবং হত্যার পর সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়।'
নুসরাতের পরিবারেরও দাবি, আত্মহত্যা প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টাকারিদেরও শাস্তির আওতায় আনা হোক।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত না করে ঢাকায় বদলি করায় ক্ষুব্ধ সোনাগাজীর মানুষ।