বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের জীবন্ত কিংবদন্তি অর্থহীনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যান্ড লিডার সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন এবারও অংশ নিলেন বিশ্বসেরা মিউজিশিয়ানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত 'ন্যাম শো'তে। ২০১৫ সাল থেতে এই শো'তে তিনি নিয়মিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এনাহিয়াম কনভেনশন সেন্টারে বিশ্বখ্যাত গিটার কোম্পানি এমটিডি'র ব্যানারে এন্ড্রু গৌচি, বাবি লোউইচ, জাস্টিন রেইনিস, ইভানদের মতো বিশ্বসেরা বেজ গিটারিষ্টের সঙ্গে ঝুলছে 'বেজবাবা' সুমনের ছবি।
উল্লেখ্য, 'বেজবাবা' সুমন এমটিডি ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। এছাড়া বিশ্বখ্যাত মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রোল্যান্ড ও বসের অফিশিয়াল আর্টিস্টও তিনি।
বেজবাবা সুমনের সঙ্গীত জীবন
১৯৮৬: সুমন তার রক সংগীতের জীবন শুরু করেন। এই বছরই সুমন 'ফ্রিকোয়েন্সি' নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন।
১৯৯০: ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে সুমন বেস গীটার বাজাতেন। এ বছর সুমনের তার ব্যান্ডের নাম বদলে 'রক ফ্যান্টম' রাখেন। 'সাইল্যান্স' ব্যান্ডে সুমন লীড গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন। এর কয়েকদিন পর তিনি 'ফিলিংস'-এ বেস গিটার বাদক হিসেব বাজানো শুরু করেন। এলাকার স্টুডিওতে বেস গিটার বাদক হিসেবে বাজানো শুরু করেন।
১৯৯২: বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেইজ, ইন ঢাকা, সুইট ভেনম, রক ব্রিগেডে বেস গিটার বাদক হিসেবে বাজান। এই বছরই তার প্রথম অ্যালবাম 'সুমন অর্থহীন'-এর কাজ শুরু করেন।
১৯৯৩: এবছর সুমন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ফিলিংস ত্যাগ করেন। তিনি একক অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করেন। তার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন ধারার গান করার। তিনি এমনভাবে একক গান করা শুরু করেন যাতে ব্যান্ডের পরিবেশটা একক গানেও বজায় থাকে। তিনি ফায়সাল এবং রাসেলের সাথে তার প্রথম গান করেন। তার গানে ড্রাম বাজিয়েছিল রুমি।
১৯৯৪: 'জলি রজার' ত্যাগ করেন।
১৯৯৫: 'শব্দ' নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন এবং এই ব্যান্ড থেকে কিছু গান রেকর্ডিং-এর কাজ শুরু করেন।
১৯৯৬: 'শব্দ' ভেঙে যায়। 'ওয়ারফেইজে' যোগদান করেন।
১৯৯৭: ওয়ারফেইজের চতুর্থ অ্যালবাম 'অসামাজিক'-এর কাজ শুরু হয়। জি-সিরিজ থেকে সুমনের প্রথম একক অ্যালবাম 'সুমন ও অর্থহীন' প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। সমালোচকরাও নতুন ধারার এই গানটির প্রশংসা করেন।
১৯৯৮: 'সুমন নতুন একটি দল গঠন করার পরিকল্পনা করেন। 'ফেইথ' ব্যান্ডের টিটি ও সেন্টু তার পরিকল্পনায় সহায়তা করে। আরো কয়েকজন সংগীতশিল্পীকে নিয়ে সুমন 'সুমন ও অর্থহীন' নাম দিয়ে ব্যান্ডের কার্যক্রম শুরু করেন।
১৯৯৯: ওয়ারফেইজ ত্যাগ করেন। এই বছরই ব্যান্ডের নাম ঠিক হয় 'অর্থহীন'।
২০০০: অর্থহীনের প্রথম অ্যালবাম 'ত্রিমাত্রিক' প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামটির জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। সুমনের নাম ওয়ারউইকের 'ফেমাস ইউসার লিস্ট'-এ লিপিবদ্ধ হয়। তিনি প্রথম এশিয়ান সংগীতশিল্পী হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
২০০১: অর্থহীনের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'বিবর্তন' প্রকাশিত হয়। করেন। উল্লেখ্য যে, বিবর্তন বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসা সফল অ্যালবাম।
২০০২: অর্থহীনের তৃতীয় অ্যালবাম 'নতুন দিনের মিছিলে' প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামে রয়েছে 'সাতদিন' নামের ২৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ড এর একটি গান। এটি বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে দীর্ঘতম গান। সুমনের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'স্বপ্নগুলো তোমার মত' প্রকাশিত হয়।
২০০৩: অর্থহীনের চতুর্থ অ্যালবাম 'ধ্রুবক' প্রকাশিত হয়। সুমন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুমন আগের মত আর গান করতে পারবেন না বলেও শঙ্কা দেখা দেয়। সুমন মেটাল সঙ্গীত গাওয়া কমিয়ে দেন।
২০০৪: সুমনের অসুস্থতার কারণে ব্যান্ডের প্রায় সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই বছরই সুমন এম.টি.ডির (মাইকেল টবিয়াস ডিজাইন) অধিভুক্ত হন।
২০০৫: সুমনের চোয়ালের হাড়ে মারাত্মক সমস্যা দেয়। চিকিৎসক বলেন যে, সুমনের আগের মত গান করতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম। অর্থহীনের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সুমন এবং বাকী সদস্যরা অর্থহীন ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সুমন সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। সুমন আবার গান গাওয়া শুরু করেন। এ বছর সুমন জন ডেনভারের গানের অনুবাদ করে 'মেঘের দেশে' নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
২০০৭: সুমনের তৃতীয় একক এলবাম 'বোকা মানুষটা' প্রকাশিত হয়।
সুমন ও অর্থহীন
একক ক্যারিয়ার শুরুর আগে ওয়ারফেইজ এবং ফিলিংস ব্যান্ডে বেজিস্ট হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে "ফীলিংস" ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে প্রথম একক প্রজেক্ট "সুমন ও অর্থহীন" এ কাজ শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ঈদে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে "সুমন ও অর্থহীন" নাম নিয়েই পারফর্ম করেন।
ব্যান্ড পরিচিতি: (শুরুর সময়ে)
সুমনঃ ভোকাল, বেইজ এবং গীটার
টিটি (ফেইথ): ড্রামস
সেন্টু (ফেইথ): বেইজ গীটার
যুবায়েরঃ বাঁশি
আদনানঃ পারকিউশন
তন্ময়ঃ গীটার
বর্তমান ব্যান্ড সদস্য
সুমন (গায়ক, বেজ, গীটার)
মার্ক ডন (ড্রামস)
শিশির (লিড গীটার, কি-বোর্ড)
মহান ফাহিম (লিড গীটার, একুস্টিক)
বেজবাবার ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র
এম.টি.ডি. (মাইকেল টোবিয়াস ডিজাইন) ৫ তারের বেস ( মাইকেল টোবিয়াস সুমনের জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করে দেন)
ক্র্যাফট ৫ তারের সেমি-একোস্টিক বেস।
ভেরিএক্স একোস্টিক ৭০০।
লাইন ৬ বেস পড এক্সটি লাইভ।
এসডব্লিঊআর সুপার রেডহেড।
ইয়ামাহা বেস সিন্থেসাইজার।
বেস ভলিউম পেডেল।
অতীতে যেসব ব্যান্ডে বাজিয়েছেন
রক ফ্যান্টম (১৯৮৬-১৯৯২)
সাইলেন্স (১৯৯০-১৯৯২)
ফিলিংস (১৯৯০-১৯৯৩)
জলি রজার (১৯৯৩-১৯৯৪)
এসিস (১৯৯৩-১৯৯৪)
শব্দ (১৯৯৫-১৯৯৬)
ওয়ারফেইজ (১৯৯৬-১৯৯৯)
প্রকাশিত অ্যালবামসমূহ
একক
সুমন ও অর্থহীন। প্রকাশকাল ১৯৯৭।
কখনও। প্রকাশকাল ১৯৯৯।
যদি কভু। প্রকাশকাল ১৯৯৯।
একটু ঘুম (রক উইথ রেডিও ম্যানিয়া)
ওলটপালট (বাপ্পা উইথ রকারস)
স্বপ্নগুলো তোমার মত। প্রকাশকাল ২০০২।
মেঘের দেশে। প্রকাশকাল ২০০৫।
বোকা মানুষটা। প্রকাশকাল ২০০৭।
আজ এসেছি। প্রকাশকাল ২০১১।
প্রতিচ্ছবি ২০১২। প্রকাশকাল ২০১২
মা। প্রকাশকাল ২০১৩।
চাঁদর। প্রকাশকাল ২০১৩।
আমজনতা। প্রকাশকাল ২০১৩।
সউল ফুড পার্ট ওয়ান (ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম)। প্রকাশকাল ২০১৬।
ব্যান্ড অ্যালবাম
ত্রিমাত্রিক (অর্থহীন)। প্রকাশকাল ২০০০।
বিবর্তন (অর্থহীন)। প্রকাশকাল ২০০১।
নতুন দিনের মিছিলে (অর্থহীন)। প্রকাশকাল ২০০২।
ধ্রুবক (অর্থহীন)। প্রকাশকাল ২০০৩।
অসমাপ্ত-১ (অর্থহীন । প্রকাশকাল ২০০৮।
অসমাপ্ত-২ (অর্থহীন)। প্রকাশকাল ২০১১।
ক্যান্সারের নিশিকাব্য (অর্থহীন) । প্রকাশকাল ২০১৬।
অন্যান্য
ফুয়াদ ফিচারিং “এখন আমি" ( সুমন ও আনিলা) ৷ প্রকাশকাল ২০০৭ ৷
ব্যক্তিগত জীবনে সুমন “খালেদ গ্রুপ অফ কোম্পানি” সহ মোট আঠারোটি কোম্পানির ডিরেক্টর এবং সাতটি কোম্পানির সিইও।