গণহারে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং অস্ত্রবাজির কারণে অস্থির হয়ে উঠছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। বিশেষ করে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পাহাড়ের বাসিন্দারা। আঞ্চলিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সন্ত্রাসীরা এই জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থির করে তুলতে দেশি বিদেশি চক্রান্ত চলছে বলে দাবি জনসংহতি সমিতি, জেএসএসের।
আগে শুধুমাত্র একটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে চাঁদা দিলেই কাজ হয়ে যেতো রাঙ্গামাটিবাসীর। কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত গ্রুপগুলোতে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় তৈরি হচ্ছে গ্রুপ ও উপগ্রুপ। বিশেষ করে শান্তি চুক্তির পক্ষে’র এবং বিপক্ষের পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির অভিযোগ বেশি উঠছে। যে কোনো উন্নয়ন কাজে চাঁদা দেয়া এখানে অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের এম পি ফিরোজা বেগম চিনু জানান, 'ছোট ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ সত্য কিন্তু সাক্ষীর অভাব আছে।'
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদার জানান, 'চারটা গ্রুপ একে অপরকে মুখোশধারী বলবে। অপকর্ম করবে আর উদর পিণ্ডি বুদর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর এমন হলে পাহাড় আরও অশান্ত হয়ে উঠবে।'
পার্বত্য শান্তি চুক্তির আগে পাহাড়ি অঞ্চলে শুধুমাত্র জনসংহতি সমিতির আধিপত্য ছিলো। পরবর্তীতে চুক্তির বিরোধিতা করে গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ। কিন্তু দু’টি সংগঠনই ভাঙনের মুখে পড়ে নতুন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে জেএসএস সংস্কারপন্থী এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। রাঙ্গামাটিতে সন্ত্রাস সৃষ্টির পাশাপাশি চাঁদাবাজির জন্য আঞ্চলিক দল ও সংগঠনগুলোকেও দায়ী করা হয়। স্থানীয় নেতাদের দাবি, রাজনীতিকরণের কারণেই সন্ত্রাসীদের দমন করা যাচ্ছে না।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার এমপি ঊষাতন তালুকদার জানান, 'অভ্যন্তরীণ কোন্দল একটা গভীর ষড়যন্ত্র। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অনুমান করা যেতে পারে।'
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ফোরাম সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা জানান, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যেকের যদি স্বদিচ্ছা থাকে এবং আমার সরকার যদি সেভাবে আন্তরিক হয় তবে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব বলে মনে করি।'
সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যর কথা স্বীকার করলেও তাদের প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, 'এরা আসলে সন্ত্রাসী। তবে এরা কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমরা বিভিন্ন সময় চেষ্টা করছি এদের ধরার জন্যে।'
১০ উপজেলার রাঙ্গামাটির লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। আর বাঘাইছড়ি, জুড়াইছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বরকল উপজেলা এখানকার দুর্গম অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত। যেখানে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আধিপত্য সবচে বেশি।
কেএস